গত ২৩ মে সন্ধ্যায় ধানমন্ডি২৭ এ বুয়েটের সিনিয়র আতিকুর রহমানের সাথে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা আড্ডাকালে তিনি একটি গুরুতর প্রশ্ন রাখেন আমার উদ্দেশে- ‘যে বা যারা বাস্তবজীবনে নানামুখী কাজে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত থাকে তাদের পক্ষে চাইলেও কি দিন-রাত মিলে ২ ঘন্টার বেশি সময় দেয়া সম্ভব ফেসবুকে? এমনকি প্রতিদিন লগইন করাও খুবই কঠিন ব্যস্ততাহেতু। টিনএজারদের কথা জানি না, ৩০ পেরুনো কোনো মানুষ যখন গড়ে ৪-৫ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ফেসবুকে কাটাচ্ছে তখন ৩টা সম্ভাবনা থাকতে পারে-

১. তার হাতে করার মতো পর্যাপ্ত কাজ নেই। বা থাকলেও  ফাঁকিবাজি করছে।

২. সে এমন এক নিরাপদ পেশায় আছে যেখানে স্পেয়ার টাইম থাকে প্রচুর, অথবা জবাবদিহিতা শক্ত নয়।

৩. ফেসবুকটাকে সে নিজের পেশাগত জীবনে কাজে লাগাচ্ছে অথবা লাগাতে চাইছে,কিংবা কারো পেইড এজেন্ট বা এজেন্ডা পূরণ করছে ।

ফেসবুকের  ইউজার ডায়নামিক্স নিয়ে চিন্তা করেছো কখনো’?

— তার প্রশ্নটা এক নাগাড়ে দীর্ঘদিন আচ্ছন্ন রাখে আমায়।

প্রথম প্রশ্ন আসে- আমি নিজে কতক্ষণ ফেসবুকে সক্রিয় থাকি? মেসেঞ্জার অন থাকে সর্বক্ষণ, বিভিন্ন বিরতিতে হোম পেজ পর্যবেক্ষণ করা, কনটেন্ট তৈরি করা মিলিয়ে খণ্ডিত সময়গুলো সমন্বিত করলে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ ঘন্টা সময় ফেসবুক তহবিলে দান করাই হয়।

তখনই প্রতিপ্রশ্ন করি, কেন ৫-৬ ঘন্টা ব্যয় হয় ফেসবুকে?

কারণ নিজের ইনভেস্টিগেশন আর এনালাইসিস পেশার পোর্টফোলিও তৈরি, সাথে লিড সংগ্রহের উদ্দেশ্য থাকে। এবং বিভিন্ন সোস্যাল পারস্পেক্টিভ পর্যবেক্ষণের অনিবার্য তাড়না কাজ করে।

— তাতে সারমর্ম পাই আতিকুর রহমানের ৩ নম্বর পয়েন্টটা আমার সাথে অনেকাংশে মিলে যাচ্ছে (পেইড এজেন্ট/ এজেন্ডা পূরণ অংশটুকু বাদে)।

প্রায় প্রতিটি বড়ো ব্রান্ড কোম্পানির ফেসবুক পেজ রয়েছে, অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে কেনা-বেচাও করে থাকে। এই চর্চা প্রভাবিত করেছে বিভিন্ন একক ব্যক্তিকে, যাদের অফিস বা শো-রুমের প্রয়োজন নেই, একটি ফেসবুক পেজ খুলে কনটেন্ট মার্কেটিং করে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করছে। সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সাইট ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে স্কিল বা চাহিদা এক্সচেঞ্জের মার্কেটপ্লেস এ।

এখানে পোশাক, প্রসাধনী, গেজেট থেকে শুরু করে আম, লিচু, মাছ, গরু পর্যন্ত বিক্রি হয়৷ আচার, ঘরে রান্নাকৃত খাবার, মশলা— অর্থাৎ প্রয়োজনীয় পণ্য অথবা দ্রব্যসামগ্রীর সবই কোনো না কোনো ফেসবুক পেজে পাওয়া যাচ্ছে। ফেসবুককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই বাজারব্যবস্থার চরিত্র দারাজ বা রকমারি ডট কম এর মতো পরিচিত ই-কমার্সের চাইতে পুরোপুরি আলাদা। এখানকার মূল শক্তি পুশ সেলিং; বন্ধু-বান্ধব আর পরিচিতদের কাছে বিক্রির মধ্য দিয়ে শুরু হয়, সমান্তরালে চলে আত্মবিন্যাস (প্রচারণার মাধ্যমে নিজেকে মূল্যবান হিসেবে উপস্থাপন), এক্ষেত্রে যাদের পারদর্শীতা বেশি এবং সিভিক সেন্স কিছুটা কম্প্রোমাইজড (একজন বিরক্ত হচ্ছে কিনা চিন্তা না করেই নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের গল্প শোনাচ্ছে) তারা পরিচিত গণ্ডির বাইরেও অর্ডার পেতে শুরু করে; কারো কারো সফলতার সীমা প্রসারিত হয়।

কোয়ালিটি এবং স্বচ্ছতা– এই দুটো শর্তও অবশ্য অবধারিত।

ফেসবুকে জনপ্রিয় অথবা অনেক বেশি সক্রিয় যে কোনো মানুষকে পর্যবেক্ষণ করলে ভাবনায় ঘুরতে থাকে আতিকুর রহমানের উল্লিখিত ৩ সম্ভাবনার কোনটা সে পূরণ করছে। যদিও তিনি বয়সের একটা ক্লজ রেখেছেন, তবু ৩০ এর নিচে থাকা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও মন্তব্যটা প্রযোজ্য। ২ নম্বর পয়েন্টটা একটু পরিমার্জনা করে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার- খ্যাতি প্রভৃতি শব্দগুলো যুক্ত করে নিলেই হবে। (যদিও এগুলো সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই সত্য)

তবে এই কাঠামোতে চিন্তা করতে গিয়ে সহসা বাধার সম্মুখীন হই। ডিম বা পোশাক বিক্রি করছে এক বা একাধিক ব্যক্তি যারা ইনডিভিজুয়াল মাত্র, সামষ্টিক বা সামগ্রিক ডায়নামিক্স পর্যবেক্ষণে প্রয়োজন একটি কমিউনিটি যেখান থেকে একটি গোষ্ঠীচরিত্র বোঝার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

সেই চাহিদা থেকে একটি ফেসবুক গ্রুপকে নমুনা হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

২০১৬ এর সেপ্টেম্বরে যে গ্রুপটি আত্মপ্রকাশ করেছিল ফেসবুকে, ৪ বছর পূর্ণ করার পূর্বেই তাদের সদস্য সংখ্যা ২ লক্ষ ৭০ হাজার এ উন্নীত হয়েছে। নিছক ফেসবুক গ্রুপ এ আবদ্ধ না থাকে ফাউন্ডেশন,  পাবলিকেশন্স এর বিকাশ ঘটিয়েছে। এত বৃহৎ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিতে নিশ্চয়ই কয়েকজন ব্যক্তিকে এখানে রীতিমত চাকরি করতে  হয়; স্বেচ্ছাশ্রমের পরিধিতে এটা কুলাবে না। সমগ্র কর্মচেইনের নিউক্লিয়াস অনুসন্ধান করলে সেই ফেসবুক গ্রুপটিতেই ফিরে যেতে হবে।

৫০ জন রেন্ডম ফেসবুক ইউজারকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় পেন্সিল গ্রুপটার নাম শুনেছেন কিনা, ‘না’ বলতে পারে এদের কত পারসেন্ট?

ইউজার ডায়নামিক্স বুঝতে নমুনা হিসেবে পেন্সিলকেই কেন নিচ্ছি? বিশেষত যে গ্রুপের সদস্যদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অংশ লেখালিখি করেন, তারা কোনো একটা লাইন সামান্যতম সেনসিটিভ মনে করলে লেখককে সংঘবদ্ধ সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।

কারণ হিসেবে  ‘শিল্পভিত্তিক কমিউনিটি’ থিমটিকে ভাবা যায়। নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত একটিও কবিতা লিখেনি অথবা কখনো নাচ-গান-বিতর্ক প্রতিযোগিতা-অভিনয় করেনি এমন বাঙালি বিরল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কবি ঢুকে পড়ে উপার্জনে, গানবাজ কিশোর-কিশোরীটিও প্রশংসা আর স্বীকৃতির অভাবে চর্চা বন্ধ করে দেয়। যদি এমন একটা প্লাটফরম থাকতো যেখানে সেই কিশোরবেলার সাহিত্যিক লেখা প্রকাশ করতে পারবে, কিংবা গান গেয়ে হাজারো মানুষকে শোনানোর সুযোগ পাবে কেমন হতো, তাই না? যে কোনো বিনোদন, চাকরি বা প্রযুক্তির গ্রুপের সাথে এখানেই পেন্সিলের বিশাল পার্থক্য। সেগুলোতে আলোচনা বা তর্ক হয় অন্যের কৃতিত্ব নিয়ে, পেন্সিলে ব্যক্তি নিজেই আলোচনার টপিক নিজের কর্মসূত্রে; তাকে শিল্প বা প্রতিভার ব্যানারে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটাই এই গ্রুপের  USP (ইউনিক সেলিং প্রোপজিশন)। বিশেষ করে যে প্রতিভা ইতোমধ্যেই জীবিকাচিন্তার সাথে সমঝোতা করে নিয়েছে, তাকে যদি ১০ জন বাহবা দেয়, এমনকি তার লেখনি প্রতিভা রাবা খানের আর গায়কি  প্রতিভা মাহফুজুর রহমান মানের হলেও সে এক অনির্বচনীয় তৃপ্তির অনুভূতি লাভ করবে। এই যে মিডিওক্রিটিক প্রতিভা-ফ্যান্টাসি তার একটা সামাজিক ভ্যালু রয়েছে। এই সামাজিক ভ্যালুকে লিকুইডিফাইড বা আর্থিক তারল্যে রূপান্তরের সুযোগ কি তৈরি করা যায় না?

সেই ভাবনা থেকেই পেন্সিলকে নির্বাচন।

পেন্সিলের সম্বন্ধে কার মাধ্যমে জেনেছিলাম মনে নেই। আমি যেহেতু দীর্ঘ নিবন্ধ লিখি নানা বিষয়ে,  খুব বেশিসংখ্যক মানুষ সেসব পড়ে না, তার প্রস্তাবনা ছিল পেন্সিল গ্রুপে যেন যুক্ত হই; ওখানে পড়ুয়া মানুষ আছে প্রচুর। তার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ায় গ্রুপে যুক্ত হই, কিন্তু কখনো একটা শব্দও লেখা হয়নি। কেন লিখিনি জানি না, বা সেই কারণটা এই আলোচনায় জরুরী নয়।

তবে গ্রুপে মাঝেমধ্যে হানা দেয়া হয় বিভিন্ন সদস্যের গান শুনতে। রীতিমত সেট আপ তৈরি করে গান গেয়ে গ্রুপে পোস্ট করেন অনেকে। তাদের কেউ কেউ প্রতিভাসম্পন্ন। এসব সম্পূরক তথ্য দিচ্ছি পেন্সিলের সাথে আমার সম্পৃক্ততা মাত্রার মৃদুতা বোঝাতে।

অনলাইনে কাদের ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়? যাদের ফলোয়ার সংখ্যা লাখের কাছাকাছি বা তারও বেশি। — এই প্যারামিটার অনেকটাই ভোটের রাজনীতির ন্যায়। কার সংগ্রহে কত মানুষ, এভাবে বিচারের ফলে কী চাইছে তার পরিবর্তে কী করলে মানুষ আমাকে চাইবে সেই ভাবনা গুরুত্ব পেতে শুরু করে।

ধরা যাক ‘N’ একজন ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ব্যক্তিত্ব, তার ফলোয়ারসংখ্যা ২ লাখ। প্রথম প্রশ্ন সে যদি ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রিয়ভাবে পরিচিত কোনো ব্যক্তিত্ব না হয়ে থাকেন তিনি ঠিক কোন ধরনের ভ্যালু নিয়ে ডিল করছেন যার কারণে ২ লাখ মানুষ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন এতোসংখ্যক মানুষ যদি তাকে ফলো করে তিনি যদি ভাবেন পরিচিতিটা কাজে লাগানো যাক সেই ভাবনাতে সমস্যা আছে কিনা?

চূড়ান্ত প্রশ্ন, ধরা যাক আমার বন্ধু কাওসার ‘N’ এর ফলোয়ার। কাওসারের মতো বাকি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ জন মানুষ তাকে কেন ফলো করছে? এটাই সবচাইতে গুরুতর জিজ্ঞাসা। এটার উৎস খুঁজে পেলেই ইউজার ডায়নামিক্সটা অনেকটা সহজবোধ্য হয়ে উঠবে।

পেন্সিলের ফাউন্ডিং সদস্য কারা, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী কিছুই জানা নেই। তবে কয়েকটি অনুমান করা যেতে পারে

১. তাদের মধ্যে এক বা একাধিক অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার থাকার কথা যাদের গড়ে ৫০ হাজার বা ততোধিক ফলোয়ার রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১০% লয়্যাল। অন্যান্য ফাউন্ডারদের যদি গড়ে ৩-৪ হাজার ফেসবুক ফ্রেন্ড থাকে, সেখানকার ১০% লয়্যাল হয় সমস্ত পুঁজি যোগ করে ১০-১২ হাজার মানুষের পুল পাওয়া যায়। এটাই ইনিশিয়াল ক্যাপিটাল হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। ১২ হাজার মানুষের মাত্র ৫% যদি ২ মাস পর্যায়ক্রমে কনটেন্ট সরবরাহ করে সেখান থেকে প্রাথমিক পোর্টফোলিও তৈরি হয়।

২. ফাউন্ডিং মেম্বারদের মধ্যে অন্তত ২ জন ব্যক্তি ছিলেন যারা লেখালিখির চাইতে সাংগঠনিক দক্ষতায় বেশি এগিয়ে। ধরা যাক ১ লাখ ফলোয়ার সমৃদ্ধ একজন অনলাইন আইকন একটি গ্রুপ খুললেন, তারপর নিজের প্রোফাইল থেকে কয়েকদিন পোস্ট দিলেন। তাতেই কি সেই গ্রুপে ১০ হাজার সদস্য যুক্ত হবে? একেবারেই সম্ভব নয়। হয়তো ১-২ হাজার অন্ধ অনুসারী বাছবিচার ছাড়াই যুক্ত হবে, যাদের কোনো এক্টিভিটিই থাকবে না গ্রুপে। এজন্য প্রয়োজন গ্রুপটার একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা। সেই কাজটিতে লেখক বা শিল্পীরা আগ্রহ পাওয়ার সম্ভাবনা কম, যারা ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কাজে অভ্যস্ত তাদের জন্য এটা কঠিন কিছু নয়।

৩. ফাউন্ডেশন বা পাবলিকেশন্স খোলা হবে এমন সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে গ্রুপ খোলা হয়েছিল সেই সম্ভাবনাকে জোরালো বলবো না। এটা হয়তবা রেসপন্সের পরম্পরায় উদ্ভাবিত সিদ্ধান্ত। তবে বহু মানুষ সংগ্রহের টার্গেটটা হয়তবা প্রথম থেকেই ছিল। ৪৬ মাসে অনলাইন-অফলাইন মিলে তারা ২২টি ইভেন্ট আয়োজন করেছে, মানে গড়ে প্রতি ২ মাসে একটি ইভেন্ট। যে কোনো ইভেন্ট মানেই ইন্টারেকশন বা এনগেইজমেন্ট। এবছর তারা ৫৪টি বই প্রকাশ করেছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স থেকে। বাংলা ট্রিবিউনে পড়লাম তারা এর সাথে ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে মিলিয়েছে। আগের বছর নাকি ৫২টি বই প্রকাশ করেছিল ১৯৫২ এর সাথে মিল রেখে। পপুলিস্ট ভাবনাকে উপজীব্য করার এই প্রবণতা থেকে প্রশ্ন আসে ৫২ বা ৫৪টি বই প্রকাশের যে খরচ সেটা একটা ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ কীভাবে যোগাড় করে?দুটো সম্ভাবনা। প্রথমত বইয়ের লেখক নিজে খরচ বহন করছেন, পেন্সিল কেবল নিজের ব্রান্ড ইমেজ ব্যবহার করতে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের পৃষ্ঠপোষক বা স্পন্সর হিসেবে কাজ করছে।

স্পন্সর কেন করছে এবং এত মানুষ কেন যুক্ত হয়েছে এ দুটো প্রশ্নের অনুসন্ধান করা যেতে পারে। আমি নিজে কেন যুক্ত হয়েছিলাম? ওই যে কে যেন বলেছিল ‘এখানে প্রচুর কোয়ালিটি পাঠক আছে’- সেই ম্যাজিকাল পঙক্তির প্রলোভনে। যে ব্যক্তির নিজের কোনো মৌলিক গানের ট্র্যাক নেই, বিভিন্ন শিল্পীর গান কাভার করছে এত আয়োজন করে, সে কি কণ্ঠশিল্পী হওয়ার আকাঙক্ষা পূরণের জন্য এটা করছে, নাকি গাইতে জানার যোগ্যতা প্রদর্শন করে তারিফ পেতে?—শিল্পক্ষুধা নাকি প্রশংসাক্ষুধা, কোনটার মার্কেটিং করা হচ্ছে? বা যেসব গল্প-কবিতা পোস্ট করা হচ্ছে সেখানকার মন্তব্যের ঘরে বিশ্লেষণাত্মক ক্রিটিক থাকে কী পরিমাণ? নাকি ২০ বা ৩০ জন মন্তব্য করেছে এটাই ব্যাপকতর আনন্দের? বই আকারে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে, লিখতে গিয়ে আমি ৩০ জনের সাথে পরিচিত হলাম যারা সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছে, তারপর একদিন কোনো একটা অর্থ উপার্জনকারী পদক্ষেপ নিলাম; এই যোগাযোগগুলো তো কাজে দেবে—– সোস্যাল ইন্টারেকশনের এই আঙ্গিক থেকে শিল্পচিন্তাকে মূল্যায়ন করলে শিল্পমনস্কতাকে একটি কমিউনিকেশন বা নেগোশিয়েশন টুলস বলা যায়। ধরা যাক উত্তরার একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করতে চান। এ উদ্দেশ্য তিনি ভেনিসের ট্রেড ফেয়ারে অংশ নিলেন, অনেক বায়ারের সাথে গল্প হলো, লাঞ্চ-ডিনার হলো, সেই বায়ারের সাথে ডিলিংসটা চূড়ান্ত হলো। এর মধ্যেও শিল্পমনস্কতা প্রবলভাবে বিরাজমান।

কিন্তু প্রশ্নটা অন্যত্র। এবছর বইমেলায় পেন্সিল থেকে প্রকাশিত ৫৪টা বইয়ের মধ্যে কতগুলোর ৩০০ কপি বিক্রি হয়েছে, এবং ক্রেতাদের মধ্যে পেন্সিলসূত্রে ইতোমধ্যেই লেখকের ব্যক্তিগত পরিচিত মানুষ কত পারসেন্ট?  উত্তর জানা জরুরী নয় তেমন।

———– পেন্সিলের কেইসটা পর্যবেক্ষণ করে যদি ৩টি অনুসিদ্ধান্তে উপনীত হতে চাই কী কী পাওয়া যেতে পারে?

১. তানসেন যত বড়ো শিল্পীই হোক তার একজন পৃষ্ঠপোষক সম্রাট আকবর প্রয়োজন। নইলে তাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান শেখাতে হতো বাজার-সদাই করতে।

২. সমমনা, সমচিন্তা ধর্মী শব্দগুলো স্ট্র্যাটেজিকাল ও সমঝোতাসূচক চুক্তির মতো যার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মেয়াদ ফুরালে নবায়ন অথবা বাতিল করতে হয়।

৩. মানুষের বয়স যতোই বাড়ুক একটুখানি অবসর পেলেই কৈশোরে ফিরে যায়, এবং বাজারে মাছ-মাংস কিনতে গিয়ে একফাঁকে নিজেকেই বিক্রি করে ক্রেতা সেজে কিনে নিয়ে আসে।