বিগত ১৩ বছর ধরে অনবরত ইমেইল লিখে লিখে এবছরের শুরুর দিক থেকেই একঘেয়েমিতায় ভুগতে শুরু করি। মনে পড়ে যায় স্কুলে পড়ার দিনগুলো; পত্র লিখতাম, পোস্ট অফিসে গিয়ে পোস্ট করতাম। এর মধ্যে ঐশ্বরিক আনন্দ ছিলো। গত বছরের শেষের দিকে একবার উদ্যোগ নিই পুরনো বন্ধুদের ইমেইল পাঠাবো৷ ১১ জনের তালিকা বানাই, ৩ জনকে পাঠাই ও। কিন্তু যে চিন্তাধারা থেকে ইমেইল লেখার উদ্যোগ নিয়েছিলাম লেখার পর অনুভূতির মিল পাচ্ছিলাম না একদমই। ফলে আগ্রহ হারিয়ে যায়। যা আমার মধ্যে ইমপ্যাক্ট তৈরি করে না, তাতে আগ্রহের আয়ুও দীর্ঘ হয় কম।
পত্র সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যেই একটি আকর্ষণীয় জায়গা।২০১৫ তে যখন বেনিফিট অব ডাউট বই লিখি সেই বইতে টেন্ডুলকার-ওয়ার্ন, স্টিভ বাকনার-ডেভিড শেফার্ড, টনি গ্রেগ- মাইকেল হোল্ডিংকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু সেইসমস্ত চিঠি তো তারা পাবে না কোনোদিনও।
২০০৯-১০ এর দিকে সাজি আপু পত্র বিষয়ক বই লিখে একটা। ফ্ল্যাপের কথাগুলো আমি লিখে দিয়েছিলাম। সাজি আপুকে কত ইমেইল লিখেছি, তিনি আমাকে কানাডা থেকে হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। আমি লিখবো প্রতিশ্রুতি দিয়েও মোহাম্মদী বেগের মতো আচরণ করেছি। সেই প্রায়শ্চিত্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। প্রায় প্রতিদিনই ‘কিন্তু’ গল্পের ষতকো নামের পিঁপড়াটি হেলানো দেয়াল বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে চিঠি সংক্রান্ত অমার্জনীয় অপরাধটি স্মরণ করিয়ে দেয়। ষতকো আর শাইলোক অভিন্ন সত্তা হয়ে উঠে। ইমেইল লেখাটা যে ইদানীং একঘেয়ে লাগছে, ষতকোর পীড়াপিড়ি একটা কারণ হতে পারে।
প্রাচীন লেখকদের পত্র সংকলন বের হয়েছে তাদের মৃত্যুর পরে। ভবিষ্যত পৃথিবীতে হয়তোবা প্রকাশিত হবে ইমেইল সংকলন। কিন্তু খামে ভরে পোস্ট অফিসে গিয়ে চিঠি পোস্ট করার যে আনন্দ, ৪০ হাজার ইমেইল লিখেও তার সমতুল্যতা পেলাম না। ইমেইল লিখি মূলত চিন্তার ট্র্যাক রাখতে, যাতে একটিও হারিয়ে না যায়। চিঠি লিখতাম দায়িত্ববোধ এবং কানেক্টিভিটির প্রত্যাশা থেকে।
আমি এখন জীবনের যে পর্যায়ে অবস্থান করছি, নিছকই মনের আনন্দে পত্র লেখা আমার প্রায়োরিটিতে থাকার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু নামহীন বই লিখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আমি অক্সিজেনহীনতায় ভুগছি, i need breathing space; ইমেইল লিখতে লিখতে বসবাসের গণ্ডি আরিফার স্মার্টফোনের ছোট্ট স্ক্রিনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে; আকাশ দেখছি, কিন্তু সূর্যরশ্মির দেখা নেই। পানসে জীবনযাপন থেকে ক্ষণিকের আলোড়নের জন্যও একটা উপলক্ষ্য তৈরি করা দরকার যাতে জমাটবাঁধা বরফ গলে শীতলতার স্পর্শ দেয়।
তাই আগামী ১১মাসে ৭৯ জন মানুষকে ডাকযোগে পত্র পাঠাবো। দেশে অথবা বিদেশে থাকা পরচিতরাই ফার্স্ট প্রায়োরিটি, তবে স্বল্প পরিচিত এমনকি অপরিচিত মানুষও ‘পত্রপুরাণ৭৯’ প্রকল্পের জন্য বিবেচিত হতে পারেন। গল্পসারথি Mahmudul Hasan Sadi এর সাথে কোনোরূপ আলোচনা ব্যতিরেকেই তাকে ৭৯টা খাম কেনার দায়িত্ব দিয়ে রাখলাম, যা এই পোস্ট পড়ার পর প্রথমবার জানবে।
প্রতি সপ্তাহে ২ জনকে ডাকযোগে পত্র পাঠালে ৭৯ জন কমপ্লিট করতে ১০মাস সময় লাগবে। পত্র লেখার নোটবুক কিনবো একটা। প্রতিটি পত্র সর্বনিম্ন ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১১ পৃষ্ঠা দৈর্ঘ্যের হবে। নিজ ক্ষমতাবলে কেবলমাত্র বন্ধু Arman Hussain কে নির্বাচন করে রাখলাম। বাকি ৭৮ জন মানুষ কে হবেন জানি না এখনো।
মূলত একারণেই পোস্টটা লেখা। পত্রপ্রত্যাশী সুহৃদ, স্বল্পপরিচিত, কিংবা অপরিচিত শুভানুধ্যায়ীদের কমেন্ট সেকশনে অথবা ইনবক্সে ডাক বাক্সের ঠিকানা দেবার অনুরোধ রইলো।
আশা করছি, পত্রপুরাণ-৭৯ প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ১০ মাসে আরো বেশি উজ্জীবিত থাকতে পারবো, যা আমার লাইফস্টাইল এবং চিন্তাপ্রক্রিয়ায় অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে দারুণ সহায়ক হবে।
পত্রের প্রতি লাইনে প্রসিদ্ধি আসুক প্রাণে।।।