এখনো পর্যন্ত যে ৪টি বই লিখেছি আমি, কোনোটির পাঠকসংখ্যাই ১২৭ অতিক্রম করেনি। প্রথম বইয়ের প্রচারণায় প্রচণ্ড ছ্যাবলামি করেছিলাম, পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ প্রায় প্রত্যেককেই সেলস টার্গেট ধরিয়ে দিয়েছি। ২য় বই যতজন পাঠকের কাছে গেছে তার পেছনে রকমারি ডট কমের টেলিমার্কেটিং টিমের অক্লান্ত চাকুরি পালনই ভূমিকা রেখেছে। বাকি দুটো নিয়ে কিছুই করিনি, ফলাফলও কিছুই না।
আমার লেখার স্টাইল এবং কনটেন্টে আগ্রহী মানুষ নেই বলতে গেলে। মুষ্টিমেয় যতজন পড়ে ওর জন্য হার্ডকভারে বই প্রকাশের প্রয়োজন দেখি না, ই-বুক প্রকাশ করাই যথেষ্ট। নামহীন, সুনির্দিষ্ট দামহীন বই আমার লেখা ৫ম বই হতে যাচ্ছে। আর মাত্র ২ টা হার্ডকভার বই প্রকাশ করার ইচ্ছা; এই সময়সীমায় পাঠকসংখ্যা ২৮৩ অতিক্রম না করলে অষ্টম বই থেকে ই-বুকই বেস্ট অপশন। বাংলাদেশের পাঠক আমাকে গোনায় ধরে না, আমারও বাংলাদেশী পাঠককে গুনবার সময় নেই।
এই বিষয়টা মাথায় রেখে, আমি একটি নিজস্ব পাঠক নেটওয়ার্ক গঠন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। যারা আমার অন্তত ১টা বই পড়েছেন, এবং আগামীতে বই প্রকাশিত হলেও পড়বেন মনস্থির করেছেন তাদের নিয়েই এই নেটওয়ার্ক।
আমার লেখালিখি দর্শন ইন্টারেকটিভ। একপাক্ষিক যোগাযোগকে লাগে গরুর লেজে বসা মাছির মতোই বিরক্তিকর। লেখকের সুপেরিওরিটি মানি না। লেখা থেকে পাঠক যতটা সমৃদ্ধ হয়, লেখকের নিজের সমৃদ্ধির জায়গা আরো বেশি। আমার যতজন পাঠক, হোক সেটা ৫৩ কিংবা ৯৭, প্রত্যেকের সম্বন্ধে আমি ধারণা রাখতে চাই, অন্তত ৮৩% এর সাথে চা খেতে, দাবা খেলতে চাই, এবং ১০০% কে জীবনে ন্যূনতম একটা ইমেইল লিখতে চাই। ব্যতিক্রমী চিন্তা দ্বারা কানেক্টেড হয়ে বেশ কিছু চিন্তা বাস্তবায়নও করতে চাই।
এবারকার বইয়ে কোনো দাম নির্দিষ্ট রাখিনি, আমি দেখতে চাই বইয়ের কনটেন্টে কতজনের আগ্রহ কাজ করে। পোস্ট লিখলে লাইক পড়ে ২১১ এর বেশি, বই পড়তে আগ্রহী ইমেইল আসে না ১১ টাও; লাইক নামক এই ব্যভিচারীতার রহস্য কোনোদিনই ধরতে পারিনি, ভবিষ্যতে পারবো সে আশাও কম। ২০০৮- ২০১৪ পর্যন্ত আমার সকল লেখায় বি:দ্র: থাকতো, কমেন্টবিহীন লাইক অপছন্দ করি, এরপর বয়স বেড়েছে, বি:দ্র: উঠে গেছে, কিন্তু লাইক সংক্রান্ত মনোভঙ্গি আজো অপরিবির্তিত।
এবারকার বই প্রকাশিত হতে হতে পাঠক নেটওয়ার্ক গঠন করে ফেলবো। পরবর্তী বইগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা নীতি অনুসরণ করবো। নেটওয়ার্কে যতজন পাঠক তার চাইতে মাত্র ৭ কপি বেশি বই প্রিন্ট করবো। বইয়ের ভেতরে প্রেসের প্রাইস কোটেশন সংযুক্ত থাকবে; তাতে প্রতি কপি বইয়ের যা দাম আসে পাঠক সেটাই পরিশোধ করবে। আমার প্রয়োজন নেই কোনো প্রকাশক, কোনো ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের। বাংলাদেশের প্রকাশকদের বেশিরভাগেরই কোনো আদর্শিক অবস্থান নেই, আদতে বাংলাদেশে প্রকাশক ধারণাই একটা মিথ।এরা মূলত প্রেসে কাজ করিয়ে দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী কিছু মানুষ, যাদের প্রকাশনা ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স আছে। লেখক রয়্যালটি, চুক্তি, কপিরাইট ব্যাপারগুলো রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠিত লেখকের ক্ষেত্র ব্যতীত বেশিরভাগ বইই প্রকাশ পায় লেখকের নিজের টাকায়, অথবা ৩০০ কপি বের হলে ২০০ কপি লেখককে কিনে নিতে হয়; কথা একই হলো। বই প্রকাশ করতে প্রেসের খরচ ৩০, প্রকাশক বিল দিবে ৩৭, মাঝের ৭ হাজার টাকা তার সার্ভিস চার্জ বা প্রকাশনীর নাম ব্যবহারের মূল্য।
যারা এতে খুশি, তারা আরো খুশি হোক। আমি এসবে নেই। সাহিত্যচর্চা আমার পোষায় না, লেখালিখি করে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার বাসনাও নেই। ইন্ট্রোভার্ট মানুষ, লিখতে ভালো লাগে, চিন্তা করে আনন্দ পাই, সেগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তাই বই আকারে জমিয়ে রাখি। কারা পড়ছে, কেন পড়ছে জানলে-বুঝলেই কেবল সম্ভব নিজেকে লেভেল অব এক্সিলেন্সে উন্নীত করা।
পাঠক নেটওয়ার্কে প্রত্যেক পাঠকের জন্য ইউনিক পাঠক আইডি থাকবে, একটা ডাটাবেস মেনে চলার ইচ্ছা, এবং কোনো পাঠকের সাথে ৭৯ দিনের বেশি সময় যোগাযোগ না থাকলে আমার কাছে নোটিফিকেশন আসবে। ৬৭ বছর পর্যন্ত যদি সচল ও সুস্থ থাকি ততদিনে পাঠকসংখ্যা ৪১০০০ হবে আশা করছি। তখন হয়তোবা পাঠক মেইনটেইনের জন্য বিশাল এক ডিপার্টমেন্ট থাকবে, কিন্তু আমি ৪১০০০ এর প্রত্যেকের সাথেই স্মৃতি তৈরি করতে চাই। মার্কেটিং টার্কেটিং য়ে আস্থা নেই, আমার ভাবনার ব্যাপারে যে আগ্রহী, আমিও তার আগ্রহ দিয়ে নিজে উদ্ভাসিত হতে চাই; আমার ভাবনায় যার আগ্রহ নেই, আমারও দায় পড়েনি তার কাছে নিজেকে যাচাই করার। let him or her be happy with all his/her belongings
পাঠক নেটওয়ার্কের কাজ আজ থেকেই শুরু করতে চাই, ইতিমধ্যে একজনকে দায়িত্বও দিয়েছি কাজটা সুশৃংখলভাবে সম্পন্ন করতে।
যারা আমার বই পড়েছেন বা আগামী বইগুলো পড়তে চান, তারা ইনবক্স অথবা ইমেইল ( himalay777@gmail.com), এমনকি পোস্টে কমেন্ট করেও জানাতে পারেন।
পাঠক নেটওয়ার্ক সচল থাকুক; আকারে কলেবরে যত ক্ষুদ্রই হোক, ব্যতিক্রমী মনন তাতে দমে যায় না। পাঠক নেটওয়ার্ক নয়, শব্দটা হোক ‘ চিন্তা এক্সপ্রেস’