বাংলা সাহিত্যের (বাংলাদেশ) ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত বই কোনটি? এবং সর্বাধিক পঠিত বই কোনটি? এর উত্তর হয়তো লেখার মাঝপথে দিবো নয়তো এর পরিবর্তে অন্য আরেকটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিবো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কাছের- দূরের মানুষদেরকে সবচেয়ে বেশি যেই গানটি শোনার অনুরোধ করেছি সেটি হলো, চমক হাসানের “শেষ বলে কিছু নেই “। তাদেরকে এই গান শুনতে বলার একটি বিশেষ কারণ ছিল। আড়াই বছর আগে হতাশাগ্রস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য ‘সুখি পল্লী’ নামে একটি মেন্টাল সাপোর্ট সেন্টার করার পরিকল্পনা করেছিলাম। আমার পরিচিতজনরা এই বিষয়টি সম্পর্কে শুরু থেকেই অবগত। ‘সুখি পল্লী’ এই লেখার বিষয়বস্তু না তাই এটা অন্য আরেকদিন বলবো। তো এই হতাশাগ্রস্থ মানুষজনদের মধ্যে যাদেরকে আমি জীবনের মানে বুঝাতে ব্যর্থ হতাম তাদেরকেই মূলত এই গানটি শুনতে অনুরোধ করতাম। এই গানের কথা গুলো মূলত মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়ের লেখা। আমি এই গানের মুগ্ধ শ্রোতা। তবে আমার কাছে সবসময় মনে হয় এই গান চমক হাসানের গলায় সম্পূর্ণ প্রাণ পাইনি। অন্য কারো গলাই শুনতে পারলে হয়তো আমার সংশয়টা দূর করতে পারতাম। খুব সম্ভবত এটিই চমক হাসানের প্রথম স্টুডিও রেকর্ডিং সং।
লেখার বিষয়বস্তু এই গান কিংবা চমক হাসান না। বিষয়বস্তু হলো গানের গীতিকার মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়ের “নামহীন দামহীন” বই।
সাহিত্য সংশ্লিষ্ট মানুষজনদের বড় একটি অংশ এই বই সম্পর্কে অবগত। কারণ এই বই অন্য আটদশটি বই থেকে শতভাগ ব্যতিক্রম। এই বইয়ের প্রথম তিনটি বিশেষত্ব হলো, এই বইয়ের কোন নাম নেই, নেই কোন সুনির্দিষ্ট দাম, এমনকি লেখকের নামও নেই বইয়ে। যদি আমার তথ্যগত কোন ভুল না থাকে তবে শুধু বাংলা সাহিত্য নই গোটা বিশ্বসাহিত্যে এটাই প্রথম ব্যতিক্রমী বই।
‘নামহীন দামহীন’ বই সম্পর্কে অন্য অনেকের মতো আমিও জানি লেখক পাবলিকলি প্রথম যখন ঘোষণা দেন। শুরু থেকেই এই কন্টেন্ট নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল। আমি মনে মনে চেয়েছিলাম প্রতিষ্ঠিত কোন প্রকাশক হয়তো ব্যতিক্রমী চিন্তার এই বইটি সম্পর্কে এগিয়ে আসবে। কোন প্রকাশক আগ্রহ দেখিয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। সর্বশেষ মাস খানেক আগে সমালোচক মুরাদুল ইসলামের নেওয়া একটি সাক্ষাতকার পড়ে এই বই নিয়ে আমার আগ্রহ বৃদ্ধি পাই। তবে এর আগে গত ৯ই আগস্ট উপন্যাস প্রকাশনের ১১১১ জন শুভাকাঙ্ক্ষী চেয়ে দেওয়া পোস্টে তিনি আমার ইনটারভিউ নিতে চেয়ে একটা মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যটা ছিল এমন, আমি অংশীদারত্বে ইন্টারেস্টেড নই, তবে কনসেপ্টটা পছন্দ হয়েছে। আপনি যেহেতু আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড, হয়তোবা জানেন আমি জীবনে ৪০০০ এর বেশি সংখ্যক মানুষের ইন্টারভিউ নিয়েছি। আমি আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই। যদি আপনার থ্রিডি( ডিটারমিনেশন, ডেডিকেশন, ডেসপারেটনেস) ইফেক্ট আমাকে আশ্বস্ত করে তাহলে সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রকল্পে আমি ৪১৪১ টাকা, কম আশ্বস্ত করলে ৩১৭৯ টাকা, এবং একেবারেই আশ্বস্ত না করলে ২৩২৯টাকা অনুদান হিসেবে দিতে আগ্রহী। আত্মকেন্দ্রিক জীবন আমার কাছে নিশ্চল কাঠের চেয়ারের মতো লাগে, আমি একটি কোলাবরেটিভ কমিউনিটির স্বপ্ন দেখি। আপনার কনসেপ্টটা সেই স্বপ্নের সাথে এলাইন করে। চা খেতে খেতে বই পড়াটা আনন্দের। আমার টাকাটা আপনাদের কোলাবরেটিভ কমিউনিটির চায়ের বিল হিসেবে ধরে নিয়েন।
খুব সম্ভবত আমার প্রতি সেদিনই তার প্রথম আগ্রহ তৈরি হয়। তবে এরকম অর্থ নেওয়াটা যেহেতু উপন্যাস প্রকাশনের অফিসিয়াল নীতিবিরোধী সেহেতু আমি পরোক্ষভাবে পাশ কাটিয়ে গেয়েছি। আরও একটি কারণ ছিল, আমি এখন পর্যন্ত কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাতকার দেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করিনি। কারণ নিজেকে এখনও সেরকম কিছু মনে হয়না। এই প্রসঙ্গটা তোলার কারণ হলো, আমার জানামতে তিনি রিক্সাওয়ালা, চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীপেশার প্রায় ৪০০০+ মানুষের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। সকলকে কি তিনি তার বিনিময়ে টাকা দিয়েছেন? আমার মনে হয়না দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ শ্রম দিয়েছেন সময় দিয়েছেন। সেসব টাকার হিসেব করলে তা অনেক টাকা। তাহলে আমাকে কেন তিনি শ্রম, সময় ছাড়াও আলাদা করে টাকা দিতে চাচ্ছেন? ঐ পোস্টটি অর্থসংক্রান্ত ছিল বলে নাকি মেধার মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন? তা আমার জানা নেই তবে আমার এই দুটো ধারণা ভুলও হতে পারে। তাকে আমার ইন্টারভিউ দেওয়া হয়নি হয়তো কখনও দেওয়াই হবেনা বা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আমার ধারণা আমার প্রতি তার যেসকল প্রশ্ন আছে সেগুলোর উত্তর তিনি এখন থেকে পরোক্ষভাবে পেয়ে যাবেন। তখন হয়তো একদিনেই পেতেন এখন হয়তো দীর্ঘ সময় লাগবে।
শুরুতে আমার আগ্রহের কারণ ছিল, এই কন্টেন্ট পাঠকের সংস্পর্শে ছড়িয়ে পড়া উচিত। সর্বশেষ আগ্রহের দুটি কারণ ছিল, প্রথম কারণ হলো এই বই দিয়ে উপন্যাস প্রকাশন ব্যবসা করবে। দ্বিতীয় কারণ এই বই সম্পর্কে পাঠকের জানার প্রয়োজন আছে, আমরা পাঠককে জানানোর দায়িত্ব নিতে চাই। যেকোনো বিষয় সরাসরি বলতে ভালো লাগে লুকোচুরি আমার পছন্দ না। প্রতিটি প্রকল্পে উপন্যাস প্রকাশনের ব্যবসায়ীক চিন্তা ৫১ শতাংশ বাকি ৪৯ শতাংশ সাহিত্য সেবা। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও প্রথম কারণের ৫১ এবং দ্বিতীয় কারণের ৪৯।
গতকাল চুক্তিপত্রের সময় মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় বলেছিলেন, আপাত দৃষ্টিতে উপন্যাস প্রকাশনের মানি মেকিং স্ট্রং পয়েন্ট দৃশ্যমান না। উপন্যাস প্রকাশনের আইডিয়া গুলো ভাল, আলাদা, সৃজনশীল। এইটার মানে হইতে পারে উপন্যাস প্রকাসন খুব বেশী ভাল বিজনেস বুঝে নয়তো বিজনেস এর কিছুই বুঝে না। উনার এই প্রসঙ্গে আমি আসবো তবে তার আগে আরেকটা প্রসঙ্গ তুলি, আমার ভেতর-বাহিরের বেশিরভাগ পরিকল্পনা শেয়ার করা হয় আমার মেঝো বোনের সাথে। আমরা পিঠাপিঠি হবার দরুন বুঝাপড়া এবং সম্পর্কটা তুই তুকারির মধ্যে খুব স্ট্রং। কদিন আগে ও বলছিল, এই যে তুই বলতেছিস এই বইয়ের জন্য সাত ডিজিটের মানি ইনভেস্ট করবি তো তোর এই পেটমোটা বই কিনবে কে আর পড়বে কে? ছোটবোনকে বলেছিলাম, এই বই সবাই কিনবে না সবাই পড়বেও না। এই বই অ্যাভারেজ পাঠকদের জন্য না; যারা মূলত মানুষ পড়ে তারাই এই বই পড়বে। উপন্যাস প্রকাশনের লক্ষ্য হলো এই বই সম্পর্কে সাড়ে তিন কোটি পাঠকের দৃষ্টিগোচর করা। এখান থেকে যারাই কিনবে তারা এই বইয়ের ক্রেতা, আবার এখান থেকে যারাই পড়বে তারাই মূলত এই বইয়ের পাঠক। তো তারা কারা? যারা এই বই কিনবে বা পড়বে? তারা হুমায়ূন আহমেদের পাঠক না তবে হুমায়ূন আহমেদ থাকলে নিশ্চিত তিনি এই বই কিনে পড়তেন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের নজরে আসলে নিশ্চিত তিনি এই বই পড়বেন কিন্তু তাঁর সব পাঠকরা এই বই পড়বে না। আনিসুল হক এই বই পড়বেন, মুনির হাসান এই বই পড়বেন কিন্তু তাঁদের পাঠকরা এই বই পড়বে না। এখানেই অ্যাভারেজ পাঠক আর মানুষ পড়া পাঠকের পার্থক্য। এ জায়গায় একটা প্রশ্ন রাখি, চমক হাসান, ঝংকার মাহবুব, হাসান মাহবুবের পাঠকরা কি এই বই পড়বে? কিন্তু তাঁরা পড়েছে। এখান থেকে নির্বাচন করা সম্ভব কারা এই বই পড়বে আর কারা পড়বে না।
এবার মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়ের বিজনেস প্রসঙ্গে কিছু তথ্য দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। আমাদের যৌথ পরিবারের কোন সদস্যই ২০০৭ সাল পর্যন্ত চাকরি জিনিসটার সাথে পরিচিত হতে পারেনি। হতে পারেনি বলতে কারও আগ্রহ ছিল না এবং প্রয়োজন হয়নি। জন্মসূত্রে আমাদের ব্যবসায়ী পরিবার। ২০০৭ সালের পর আমার সেজো জেঠার বড় ছেলে প্রথম চাকরির স্বাদ নেয়। তারপর ২০১১ সালে আমি। আমার দাদার আমলের ব্যবসা; সেই ব্যবসার বয়স ১০০ ছাড়িয়ে গেছে আরও ২৫-৩০ বছর আগে। আব্বা এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তবে সেই ব্যবসা এখন আর আমাদের পক্ষে না। মাস শেষে ঘর থেকে দেওয়া লাগে। ড. মোঃ ইউনুসের গ্রামীণ শক্তির শুরু থেকেই আমরা জড়িত। এই প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতির পেছনে আব্বার সম্পৃক্ততা ছিল বিশাল। সেখানে এই ক্ষুদ্র আমিরও কিছু কিছু পরামর্শ রয়েছে। সর্বশেষ গত বছর গ্রামীণ শক্তির সাথে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। তবে সেকালের ব্যবসার চিন্তা আর একালের ব্যবসায় প্রচুর তফাৎ রয়েছে।
আমি যেহেতু দেশের বাহিরে সেহেতু লেখক-প্রকাশনা চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়ে অর্ণব এবং রাহাত এই দুইজনের একটা প্রতিনিধি টিম পাঠিয়েছিলাম। তারা কতটুকু বুঝাতে পেরেছে আর লেখক কতটুকু ধারণা পেয়েছে তা আমি জানিনা। তবে এটা ঠিক তারা আমার পরিকল্পনার ১০% এর চেয়েও কম জানে। যখন যা প্রয়োজন কেবল তখন তা জানানো হয় তাদেরকে। উপন্যাস প্রকাশন নতুন প্রতিষ্ঠান কিন্তু এর দীর্ঘ পরিকল্পনা। দশ বছরের পরিকল্পনা আমাদের। একবার অর্ণব একটা ইনটারভিউতে উপন্যাস প্রকাশন সম্পর্কে বলেছিল, মেধার খেলায় জিতে যাবে উপন্যাস প্রকাশন। সেদিনই আমার মনে হয়েছে এই ছেলে আমাকে বুঝতে পেরেছে। গত তিন বছরে বিভিন্নভাবে আমার সঙ্গে প্রায় ২০০+ ছেলেমেয়ে কাজ করেছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ঝুলে থাকা ছেলেটি অর্ণব।
আমরা পাঁচজন বন্ধুসূলভ সহকর্মীর (মাই টক, ইউর টক’ নামে মাসিক একটা আড্ডা হয়। এখানে তিনজন জাপানিজ এক জন চাইনিজ এবং বাকিজন আমি। জাপানিজ ইলামির বাংলায় বেশ দক্ষতা আছে। গত আড্ডায় সে বলছিল, রিয়াট মাহবুট আমার মনে হচ্ছে তোমার বাংলা সাহিত্যের বাজারের চেয়ে বিশ্ব সাহিত্যের বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। ইলামি খুব করে ধরতে পেরেছে আমি কেবল বাংলা সাহিত্যে নয় বিশ্ব সাহিত্যে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। এবং তা সম্ভব। উপন্যাস প্রকাশনের ‘প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল’ যদি দশ বছরে বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে পাঁচ হাজার কপি বিক্রি হয় তবে তা পাঁচ বছর পর বিশ্বসাহিত্য বাজারে বিশ হাজার কপি বিক্রি করা সম্ভব। ‘নামহীন দামহীন ‘ যদি দশ বছরে এক লাখ কপি বিক্রি হয় তবে বিশ্ব সাহিত্যে বাজারে তা দুই মিলিয়ন কপি বিক্রি করা সম্ভব। কারণ এইসব বইয়ের মর্ম বাংলাদেশি পাঠকরা না বুঝলেও বিশ্ব সাহিত্যের পাঠকরা ঠিকই বুঝে। অন্যসব প্রকাশনী যেখানে বই মেলায় স্টল পাবার জন্যে ২৫টি বই প্রকাশের দৌড়ে নেমে পড়ে উপন্যাস প্রকাশন সেখানে বছরে ১৩টি বই প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু এই নয় মাসে আমরা বই প্রকাশ করতে পেরেছি মাত্র একটি। এর প্রধাণ এবং সর্বশেষ কারণ পাণ্ডুলিপির কোয়ালিটি।
মাহফুজ সিদ্দিকী হিমায়ল উপন্যাস প্রকাশনের সবচেয়ে জটিল পয়েন্ট ধরতে পেরেছে। তবে তিনি যেহেতু নিশ্চিত একটি উত্তর বের করতে পারেননি সেহেতু বলতে হয় এর উত্তর তার সাথে আমাদের চুক্তিপত্র থেকেই বুঝার কথা নইলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে ঠিক দশ বছর। এ জায়গায় খুব স্পষ্ট করে বলতে গেলে উপন্যাস প্রকাশন একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান কচ্ছপ গতিতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে হাঁটছে।
মূল কথা হলো, মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়ের ‘নামহীন দামহীন’ বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশ করতে যাচ্ছে উপন্যাস প্রকাশন। প্রকাশিত হবে নতুন বছর ২০১৯ জানুয়ারিতে। যারা মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়কে কিংবা এই বই সম্পর্কে জানেন তারাতো জানেনই আর যাদের জানা নেই তাদের জন্য বলি, অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা (অনুবাদ) -সন্দেশ, চতুর্মাত্রিক ব্লগ সংকলন (শিক্ষাবিদ)- অন্যরকম প্রকাশনী, বেনিফিট অব ডাউট(খেলাধুলা) -অন্যরকম প্রকাশনী, প্রযত্নে হন্তা (সমকালীন গল্প) -অন্যরকম প্রকাশনী, বীক্ষণ প্রান্ত (সমকালীন গল্প) -অন্যরকম প্রকাশনী। বীক্ষণ প্রান্ত নিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রকমারি.কম তথা অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যাম মাহমুদুল হাসান সোহাগ তার এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন,
হিমালয় (FB: Himalay Pi) এর সাথে আমার পরিচয় ইমুর (FB: Fahim Rahman) মাধ্যমে। বুয়েটে প্রতিবছরই Rag ব্যাচ একটা নাটক নির্মাণ করে, মাঝে মাঝে যেগুলোর স্পন্সর আমরা করে থাকি। আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানতাম নাটকগুলো কিছুটা হালকা মেজাজের হয়; ইমু যখন আমাকে ০৫ ব্যাচের নাটকের স্ক্রিপ্টটা দিল স্পন্সরশিপ এর জন্য, আমার ধারণা ছিল এটাও সেরকম কিছু একটা। কিন্তু ওদের স্ক্রিপ্টটা পড়ার পর আমি বেশ জোরেশোরে একটা ধাক্কা খাই; ইমুকে বলি স্ক্রিপ্টের লেখকের সঙ্গে আমি পারসোনালি পরিচিত হতে চাই। এরপর থেকেই হিমালয়ের সঙ্গে পরিচয়, যা এখনো অটুট আছে এবং দিনে দিনে আমাদের ঘনিষ্ঠতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমালয়কে আমি রেসপেক্ট করি ওর চিন্তা করার ক্ষমতা আর লেখালিখির কারণে; স্পেশালি, একটা সময় উদ্ভাস-অন্যরকম গ্রুপ এর প্রায় সব লেখা আমিই লিখতাম,কিন্তু এখন হিমালয় লিখে।আমার নিজের কাজ অন্য কাউকে শিফট করতে গেলে ভরসা পাই না, কিন্তু হিমালয়কে দেবার ক্ষেত্রে আমার নিজের চেয়েও বেশি কনফিডেন্স পাই,কারণ আমি মোটামুটি শিওর থাকি যে আমার চেয়ে ও ভালভাবে বিষয়গুলো লিখতে পারবে।এর অনেক প্রমাণ ও ইতিমধ্যেই রেখেছে। যেমন, ২০১১ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় আমাদের টি-শার্ট এর জন্য শ্লোগান খুঁজছিলাম;ও লিখলো “বাংলাদেশের প্রতিটি রানের জন্য দৌড়াবে ৩০ কোটি পা”;একটা সাধারণ কথাকে এরকম অসাধারণ করে প্রকাশ করতে অন্তত আমি পারতাম না। গতবছর হুমায়ূন আহমেদ বইমেলার সময় ও দারুণ কিছু আইডিয়া দিয়েছিল।আমার শুরু থেকেই বিশ্বাস ছিল ওর মাথায় আইডিয়া অসাধারণ। প্রথমদিকে শুধু আমিই ওর সাথে ক্লোজ ছিলাম, লিটন সেভাবে ওর সম্পর্কে জানতো না। ২০১২ সালে আমি প্রায় দেড়মাসের মত আমেরিকা ছিলাম, তখন লিটনের সাথে ওর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় এবং আমি-লিটন দুজনেই এখন মোটামুটি বিশ্বাস করি, আইডিয়া জেনারেট করতে হলে সেটা আমাদের চেয়ে হিমালয় ভাল পারবে।
এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, খুব খুশির খবর হিমালয়ের আরও একটা বই প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে। আমি মনে করি, জীবনে যে কয়েকটা কাজ করে খুশি হয়েছি তার মধ্যে এটাও থাকবে যে, হিমালয়কে লেখালিখিতে উৎসাহ দিয়েছি। হিমালয়ের আইডিয়া লেভেলের জন্য আমি কেন ওর উপর এত ডিপেন্ডডেন্ট তার একটা বড় রিফ্লেকশন হচ্ছে ওর এই বইটা। গল্পের বই বলতে মানুষ যা এক্সপেক্ট করে,এইটুকু অন্তত গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি,বইটা হাতে নিয়ে যে কেউই ধাক্কা খাবে।কত ডাইমেনশনে যে গল্প হতে পারে, কত ডাইমেনশন এ চিন্তা করা যেতে পারে তার একটা এক্সাম্পল হতে পারে ওর লেখালিখি। আমি সাহিত্যের এক্সপার্ট নই, কিন্তু বই মোটামুটি পড়া হয়; সেই আলোকে আমি এটুকু বলতে পারি কনফিডেন্টলি। যারা একটু সহজবোধ্য বা দ্রুত পড়া যায়, এরকম বই পড়ে অভ্যস্ত, হিমালয়ের লেখার স্টাইল তাদের কতটা ভাল লাগবে জানি না, কিন্তু যারা অন্তত কিছুটা হলেও চিন্তা করতে চায় তাদের যে ভাল লাগবে এটা নিশ্চিত। আমি আসলে স্ট্যাটাসটা দিতে অনেক দেরি করলাম, কারণ আমি অনেকদিন ভেবেছি স্ট্যাটাসে কী লিখবো, এটা নিয়ে। গুছিয়ে লেখা হচ্ছিল না কথাগুলো। একই কারণে ওর প্রথম বই, প্রযত্নে-হন্তা নিয়েও স্ট্যাটাস দেয়া হয় নাই। প্রযত্নে-হন্তা এর স্ট্যাটাস না দেয়ার ক্ষেত্রে ২টা ফ্যাক্টর কাজ করছিল। প্রথমত, এত কিছু মাথায় চলে আসছিল যে শেষ পর্যন্ত আর লেখাই হয় নাই। ২য়ত, বইটা উৎসর্গ করা হয়েছিল আমাকে, যেজন্য আমি খুবই বিব্রত বোধ করতেছিলাম। কারণ, মানুষ সাধারণত নিজের আপনজন বা স্পেশাল কাউকে নিজের প্রথম বই উৎসর্গ করে; সেখানে আমি একজন আউটসাইডার- তাকে বই উৎসর্গ করা হয়েছে, এজন্য খুবই লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। এইজন্য স্ট্যাটাস দেবার সময় মনে হচ্ছিল, একজন আমাকে বই উৎসর্গ করেছে বলে আমি বইটার বিজ্ঞাপন করতে স্ট্যাটাস দিচ্ছি। কিন্তু ওর ২য় বই ‘বীক্ষণ প্রান্ত’ প্রকাশ পাওয়ার পর সেই লজ্জাটা নেই, যদিও এই বইয়েও আমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি রিয়েলি চাই, এই বইটা মানুষ পড়ুক, এর অবশ্য ডেফিনিট কারণ আছে। যারা হিমালয়ের মতো ভিন্নভাবে চিন্তা করতে বা লিখতে পারে, তাদের বই এজন্য পড়া উচিত, এটা একটা স্বীকৃতি যার সাথে টাকার অংক জড়িত নয়। একটা জাতি যদি মেধাবীকে সম্মান না জানাতে পারে সেখানে মেধা তৈরি হয় না- কথাটা অনেক পুরনো। কিন্তু এটার ইন ডেপথ মিনিং আমরা এক্সপ্লোর করি না। কথাটা খুবই ইম্পর্টেন্ট। মেধাবী মানুষ টাকা চায়, এরকম নয় বিষয়টা। রিকগনিশন সবাইকে চাইতেই হবে, এবং সেটা দিতেও হবে; নইলে মুড়ি আর মুড়কির মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। একজন ভাল লেখককে কেউ ১জন গিয়ে লাখ খানেক টাকা দিয়ে আসতে পারে, কিন্তু একে রিকগনিশন বলে না। তার চেয়ে বরং তাঁর একটা বই আমরা পড়ি এবং সেটা নিয়ে চিন্তা করি; এটাই হচ্ছে রিয়েল রিকগনিশন। আমাদের বই পড়ার অভ্যাস কম, কেনার অভ্যাস আরও কম; তার মধ্যেও আমি বিশেষভাবে চাইবো সবাই হিমালয়ের ‘বীক্ষণ প্রান্ত’ বইটা পড়ুক। একে যদি মার্কেটিং মনে হয়, তাহলে মার্কেটিং, তবু আমি বলবো হিমালয় যে থট প্রসেসের মধ্য দিয়ে পাঠককে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে সেই প্রসেসের সঙ্গে পরিচিত হই এবং লাইফকে, পৃথিবীকে নতুনভাবে চেনার চেষ্টা করি।
এবার শেষ কথায় আসি, শুরুতেই বলেছিলাম, বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের নাম বলবো। গত তিন বছর ধরে আমি বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম কিন্তু পাইনি। এই না পাওয়ার অনেক কারণ সেইসব আরেকদিন বলবো।