যখন বলছি নামহীন- দামহীন তখন সেটা আর নামহীন, দামহীন থাকছে না – নাম এবং দাম দুটোই নিয়ে ফেলছে। নামহীনই নামহীনতার নাম হয়ে যাচ্ছে।

আমি সাধারণত তেমন একটা বই পত্র পড়ি না। অনেক বই ই পড়া শুরু করেছি কিন্তু শেষ করতে পেরেছি খুব কম। যা পড়তে শুরু করেছি তার ১৭% মনে হয় শেষ করতে পেরেছি। এর কারণ হতে পারে দুইটা – আমার মনোসংযোগ এবং বইয়ের কনটেন্ট। নিজের মনোঃসংযোগের উপর তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ যে কনটেন্ট আমাকে বসিয়ে রাখতে পারে না- কি দায় পড়েছে সেটা পড়ার? পড়তেই যে হবে এমন তো না? অনেক মানুষই পড়া বলতে শুধু বই বুঝে। আমার কাছে পড়ার জায়গাটা আরও বড়। একটা বিচ্ছিন্ন শুকনা পাতার দিকে তাকিয়ে দুপুর পাড় করে দিতে পারি। সেটাও আমার কাছে এক ধরণের পড়া।

আমি আসলে কি জানতে চাই নিজেও জানি না, তবে কিছু একটা জানতে চাই। লাস্ট যে কয়টা বই পড়ে শেষ করতে পেরেছি- এর মধ্যে একটা হল হিমালয় ভাইয়ের নামহীন দামহীন বই। বই সম্পর্কে যা কিছু বলতে হয় তা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। প্রতিদিন আমার প্রচুর শব্দ বাক্য হারিয়ে যায়, আমি ধরতে পারি না, চুপচাপ বসে থাকি।

এই বইয়ের দুই ধরণের মূল্য আছে এক হচ্ছে আর্থিক মূল্য আর এক হচ্ছে আত্মিক মূল্য। শব্দদ্বয় যদিও কাছাকাছি- কিন্তু মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে দেখলাম দুইয়ের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব। আত্মিক মূল্য হল বই নিয়ে একটা রিভিউ লিখতে হবে এবং লেখককে ১১ টা প্রশ্ন পাঠাতে হবে। ভাই প্রশ্ন শোধবাধ – সাইটে ৩ টা প্রশ্ন করেছি আর সামনা সামনি কিছু প্রশ্ন করেছি- সামনেও তো আরও অনেক প্রশ্ন করবো- যাই হোক ১১টা হয়ে গেছে।

এখন আসি বইয়ের রিভিউ, অনেকদিন যাবত আমি কিছু লিখি না, আগেও যে খুব একটা লিখতাম তাও না। তবে সব সময় মনে হয় লিখতে হবে- কি লিখতে হবে সেটাই তো জানি না। বই এর রিভিউও লিখি লিখি করে আর লেখা হয়ে উঠে না। আমি তেমন একটা এক্সপ্রেসিভ না, বইয়ের রিভিউও লিখতে ভাল লাগে না কিন্তু যেহেতু বই পড়ে ফেলেছি এবং আত্মিক মূল্য পরিশোধ করতে হবে – এজন্য মানসিক অস্থিরতায়ও ভুগি। আবার কিছু লিখতে গেলে লিখতে না পারার শূন্যতায় ভুগি।

এ বই নিয়ে আজ একটা মেয়ের রিভিউ পড়লাম, পড়ে মনে হলে না এক বসায় যাই মাথায় আসে লিখে আত্মিক মূল্যটা পরিশোধ করি। হয়তো যা লিখতে চেয়েছি, তার কিছুই লেখা হবে না। এর আগেও তো অনেকের রিভিউ পড়েছি তখন কেন রক্ত এত গরম হল না? এটা একটা ফ্রয়েডীয় কারণও হতে পারে আবার সেই রিভিউ এর মাঝে নিজের রিভিউ এর রিফ্লেকশনের কারণেও হতে পারে। সেই রিভিউটা যে লিখেছে তার পার্সনালিটি ট্রেইট INTP হতে পারে এবং এনিয়াগ্রামে তার পজিশন ৫ নাম্বারে। সে হচ্ছে একজন ন্যাচারাল অবজার্ভার এবং সিকার , হিমালয় ভাইও তাই- আমিও কাছাকাছি। ঐ রিভিউ এও আমার অনেক কথা উঠে এসেছে। সেগুলো আর এখানে লিখছি না।

আমি অপসরে বই পড়া মানুষ না- যে বই আমার পড়তে ভাল লাগে তখন ঐটা পড়াই আমার কর্ম- সেটা বাসা অফিস যেখানেই থাকি না কেন। আমি অনেকদিন যাবত হিমালয় ভাইয়ের বইটা নিয়ে লিখতে চাচ্ছি- কিন্তু কোন এক গোপন শক্তি আমাকে পেছন থেকে ধরে রাখে- সেটা আর বাকি সব লেখার ক্ষেত্রেও। যাই হোক কথা হল- ৬১৯ পৃষ্ঠার বই আমি কিভাবে পড়া শেষ করলাম? যেহেতু আমি যে পরিমাণ বই পড়া শুরু করেছি তার মাত্র ১৭% শেষ করতে পেরেছি। সেটার দুটো কারণ হতে পারে – ১। বইয়ের কনটেন্ট ২। লেখকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ২ নাম্বার কারণটাকে ধর্তব্যের মধ্যে ধরছি না- এর আগেও কিছু ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত লেখকের বই পেয়েছি – এক দুই পাতা পড়ে আর আগ্রহ পাই নি। অবশ্য হিমালয় ভাই শুধু ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত বললে ভুল হবে উনি আমার মেন্টর এবং শিক্ষক। সেটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে বইয়ের কনটেন্টও গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ। আমি নিজেও অবসেশনে ভোগা একজন মানুষ। কখনো মনে হয়নি- ধুর আর পড়বো না। নেশাগ্রস্থের মত পড়েছি। যে কনটেন্ট নেশাগ্রস্থ না করতে পারে – সেটা পড়ে কি হবে। বইয়ের কিছু জায়গা আমার ভাল লাগেনি- বেশ কিছু জায়গা নিতান্তই ছেলেমানুষি মনে হয়েছে। এটাও লেখকের লেখার অনেক বড় একটা সৌন্দর্য্য। অনেক অনেক বড় বড় শিল্পীরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এটাই বুঝতে পেরেছেন- শিশুর চোখে দেখতে হবে এবং শিশুর হাতে আঁকতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ছেলেমানুষিটাকেও ইনটেনশনাল মনে হয়েছে। লেখক নিজের কিছু পরিপক্ক কথাবার্তা ছেলেমানুষির খোলসে ভরে ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে অরিজিনালিটিকে লোক দেখানো অরিজিনালিটি মনে হয়েছে। সেটা আমার বোঝা বা দেখার ভুল হতে পারে। তবে এই বিষয়ে আমি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ। এরকম প্রশ্ন ধর্ম গ্রন্থও নিয়েও করা যায়। ধর্ম গ্রন্থের অনেক জায়গা তো অনেকের কাছে ভাল লাগে না, অনেক জায়গা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে- এজন্য কি সেগুলো বানচাল হয়ে গেছে? বা আবার করে লেখার প্রয়াস শুরু হয়েছে? এটা তো ধর্ম গ্রন্থও না। এই বই নিয়ে অনেকের অনেক রকম প্রশ্ন থাকতে পারে- না থাকাটাই অস্বাভাবিক।

তবে কনটেন্ট বিবেচনায় এই বইকে আমার পড়া সেরা ১০ টা বইয়ের মধ্যে রাখবো। এমনো তো হতে পারে আমি বই পড়েছি ১১ টা। আসলে তা না-সেই সংখ্যা আরও বেশিই হবে। এই বই নিয়ে এখনো পর্যন্ত অনেকের রিভিউ পড়েছি , এর মাঝে বেশ কিছু রিভিউ এ দেখেছি – সারা বই জুড়ে শুধু আমি আমি লেখা। আমার কাছে তা মনে হয়নি। এই আমি আসলে কে? আমার যেটা মনে হয়েছে – এই আমি সবাই। কখনো হিমালয়, কখনো শাওন, কখনো সনেট। এখানে আমি একটা মাধ্যম , আর কিছুই না- লালন ফকিরের একটা পদ আছে –

“আমি কথার অর্থ ভারি, আমি সে তো আমার নয়
আমি কে তা জানলে সাধন সিদ্ধ হয়”

এই বই হলো আমিকে জানার একটা অসম্পূর্ণ, অসমাপ্ত জার্ণি। এই জার্ণির শেষ কোথায় জানি না? হয়তো শেষটা কেউ জানিয়েও যেতে পারে না। হিমালয় ভাই আমাকে সব সময়ই বলে প্রচুর লিখতে। কেন জানি আমি লিখি না। রফি ভাইও আমাকে প্রচুর লিখতে বলতো। লিখতে গিয়ে দেখি আমি যা লিখতে চাই তা আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কি লিখতে চাই আমি আসলে জানি না- এজন্য আর লেখাও হয় না। দিন দিন এই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। কিন্তু আমি নিজে থেকে প্রচণ্ড অনুধাবন করি আমাকে লিখতে হবে। যে জীবন যাপন করছি – কেন জানি এই জীবনকে আমার নিজের জীবন মনে হয় না। আমার জীবন অন্য কোথাও, অন্য রকম। সেটা কেমন , আমি তাও জানি না। সেই জীবন এসে প্রতি মুহূর্তে এই জীবনকে বাধাগ্রস্থ করে, থামিয়ে দেয়, গ্রাস করে নিতে চায়। তারপরও আমি সেটার স্বরূপ ধরতে পারি না। যখন এই জীবনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে চাই- তখন আবার ঐ জীবন এসে সেই পথ বন্ধ করে দেয়। এ এক অদ্ভুত টানাপোড়ন।

সেই টানাপোড়নে পড়ে আমার ঠিক ঠাক ভাবে কোন কিছু করা হয়ে উঠে না। কাজ শুরু করে শেষ করতে পারি না, আবার অনেক কিছু শুরুই করতে পারি না। এই বই নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন বেশ অবসেসনে ভুগেছি। বই পড়ার পড় থেকেই বোধ করছিলাম লিখতে হবে, লিখতে হবে। ঐতো আবার সেই প্রোকাস্টিনেশন এর চক্রে পড়ে যাই।

জীবন ভেনচিত্রের মত, ভ্যান গগের চিত্রের মত আরও অনেক কিছুর মত অথবা কিছুই না। বই জুড়ে জীবনকে জানার একটা প্রয়াস, আরও কনসাইজলি বললে নিজেকে জানার প্রয়াস in all the three ways body, heart and head.

এই বই পড়তে হলে আগে লেখককে মেইল করতে হবে himalay777@gmail.com এই মেইল এড্রেসে তারপর – বই পৌঁছে দেয়া হবে। এই বইয়ের নির্ধারিত কোন আর্থিক মূল্য নেই, আপনার বিবেচনায় যা মনে হবে তাই।