প্রাক্তন সিনেমা দেখাকালীন এবং দেখাপরবর্তীতে দুটো গুরুতর প্রশ্ন নিয়ে ডিল করতে হয়েছে, নিশ্চিত নই ডিলিংসটা কতটা কার্যকর হলো, তবে সিনেমাটির অভ্যন্তরীণ এন্টারপ্রেটেশন তৈরিতে প্রশ্ন দুটি ওজনদার:
১. স্টোরিটেলিংয়ে ট্রেন কেন ব্যবহার করা হলো। ৩০ ঘন্টার ট্রেন জার্নি আদতে কোন মেটাফরিকাল ব্যাপারস্যাপার বুঝাচ্ছে? বাস-বিমান-লঞ্চ-ট্রেনকে উপজীব্য করে বিভিন্ন ভাষাতেই প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়েছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যারেক্টারাইজেশনের ক্ষেত্রে গণপরিবহণের অন্তর্ভুক্তি অতিপ্রচলিত স্টোরিটেলিং টেকনিক। তবু প্রাক্তন এর ক্ষেত্রে ট্রেনই কেন ব্যবহার করা হলো?
২. চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের উপল, অনিন্দ্য, ভূমি ব্যান্ডের প্রাক্তন সদস্য সুরজিত এবং সোলো আর্টিস্ট অনুপমকে সিনেমার অংশ বানানোর হেতু কী? তারা না থাকলে গল্পের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনটা কী হতো, এবং অনস্ক্রিনে সরাসরি সুরজিতকে যখন ভূমির অপর সদস্য সৌমিত্র রায় সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলো অনিন্দ্যর মাধ্যমে এবং সুরজিত-সৌমিত্রের মেলবন্ধন কেন টিকলো না জানতে চাওয়া হলো, সুনির্দিষ্ট এই সিকুয়েন্সটা কেন যুক্ত করা হলো?
একটি সিনেমা দেখবার পরে প্রতিক্রিয়া লিখবার ক্ষেত্রে দুইটি ধারা লক্ষণীয়। এক, আম-বিশেষজ্ঞ, যারা সিনেমাতে গুরুত্বপূর্ণ অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা বিচার করে, গল্পের ফাঁকফোকর নিয়ে কথা বলে, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, কালার গ্রেডিং সহ হাইলি টেকনিকাল বিষয়গুলোও বাদ পড়ে না। দুই, কমলা-বিশেষজ্ঞ যারা সিনেমাটি কেন নির্মাণ করলেন পরিচালক, এবং এর কমার্শিয়াল এবং আর্টিস্টিক অ্যাপ্রোচ বোঝার চেষ্টা করেন। অভিনয়, ক্যামেরা, লাইট প্রভৃতি টেকনিকাল দিকগুলো থাকে গৌণ।
প্রাক্তন এর কমার্শিয়াল এক্সক্লুসিভনেস কী? কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির এক সময়ের সুপারহিট জুটি প্রসেনজিত চ্যাটার্জি-ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত দীর্ঘ ১৫ বছর পর একত্রে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে যে অফস্ক্রিনেও রোমান্টিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল প্রসেনজিত নিজেই স্বীকার করেছেন বিভিন্ন ইন্টারভিউয়ে। ১৫ বছর অতি দীর্ঘ বিরতি, এতদিন পরে কাজ করলে গণমনে আগ্রহ থাকবেই। সুতরাং স্টোরিলাইনেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে, নইলে এক্সক্লুসিভনেস গায়েব। সিনেমার সর্বাধিক আলোচিত গানটি খেয়াল করা যাক-
তুমি যাকে ভালোবাসো, তার জীবনে ঝড়
তোমার কথার শব্দদূষণ, তোমার গলার স্বর
আমার দরজায় খিল দিয়েছি, আমার অনেক জ্বর
তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর।
—- একই গান পুরুষ এবং নারী ভার্সন। লিরিক ঠিকঠাক, শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে ‘তুমি অন্য কারোর গল্পে নায়িকা’, নারীর ‘তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান’।
লিরিকের লাইনে লাইনে বিষন্নতা, দ্বান্দ্বিকতা। ‘কথার ওপর কেবল কথা, সিলিং ছুঁতে চায়/ নিজের মুখের আয়না আদল, লাগছে অসহায়’— প্রসেনজিত আর ঋতুপর্ণা স্ক্রিনটাইমের প্রায় পুরোটাই এই লাইনকে ধারণ করে পাড়ি দিয়েছে। সবমিলিয়ে পরিচালকের জন্য প্রজেক্টটা ছিল সার্বক্ষণিক ইগো ম্যাচ করার পর্বতসম চ্যালেঞ্জ।
প্রাক্তনে আরো দুটো দম্পতি ছিল: প্রৌঢ়, এবং নববিবাহিত। গল্পে তাদের আবশ্যকতা নিছকই বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে, নাকি দাম্পত্যের ৩টি পৃথক কেইস, সুরজিত-সৌমিত্র রায় এর ভূমিতে ভাঙন—সবকিছুর মধ্যে একটা গভীর অথচ সরল যোগসূত্র রয়েছে? কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার প্রয়োজন পড়লো কেন? যে কোনো ভিজুয়াল আর্ট দেখার সময় সিকুয়েন্স, সিম্বল, এবং এক্সপ্রেসনের এন্টারপ্রেটেশন এবং সাংকেতিক মিনিং সম্বন্ধে কৌতূহল জাগ্রত হওয়া জরুরী, নইলে সেটা বিনোদন কিংবা ভাবনাচর্চা কোনোস্তরেই উন্নীত হতে পারে না, সমগ্র ব্যাপারটাই বেসুমার সময়-কনজাম্পশনের নিরর্থকতা। এমনকি শাকিব খান বা মান্না-জসিমের স্থূল আর্ট হলেও একই কথা প্রযোজ্য।
তবে পরিচালক কেবলমাত্র সংবেদনশীল মানুষকে টার্গেট ধরে ফিল্ম নির্মাণ করলে কমার্শিয়াল সাফল্য আসে না, তাকে আম-বিশেষজ্ঞদের মনোজগতও এক্সপ্লোর করতে হয়, চাহিদা পূরণের উপকরণ যোগান দিয়ে মার্কেট ডিমান্ড বজায় রাখেন। আম-বিশেষজ্ঞের চোখ দিয়ে প্রাক্তনকে দেখলে কী পাই আদতে? একটা দাম্পত্য সম্পর্ক ওয়ার্কআউট করেনি, কিন্তু তাদের একজনের দ্বিতীয় সংসার দারুণভাবে চলছে। অন্যজনের দ্বিতীয় সংসার কেমন চলছে জানার সুযোগ হয় না, এমনকি অন্তিম দৃশ্যের পূর্বে তার ২য় সংসারের ইঙ্গিতটা থাকে উহ্য, তবে ৫ সেকেন্ডের সিকুয়েন্স এবং মাত্র ১টি সংলাপেই অনুমেয় তার সংসারটাও চলছে স্মুথ।
অর্থাৎ ম্যাড়মেড়ে মেলোড্রামাটিক স্টোরিলাইন। কেবলমাত্র প্রসেনজিত-ঋতুপর্ণা গিমিকে আম-বিশেষজ্ঞদের আকৃষ্ট করা যাবে না, কমার্শিয়ালি মুখ থুবড়ে পড়বে; বাঁচার উপায়গুলোর মধ্যে গান তো একটা হলো, আর কী কী হতে পারে? সেই প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে, ডুয়েল মিনিং অবলম্বনতাকে ধরতে পারি। অর্থাৎ স্টোরিটেলিংয়ে একটি প্যাটার্ন তৈরি করা যাতে একই সিকুয়েন্সের একাধিক অর্থ হয়, প্রশংসার পাশাপাশি কন্ট্রোভার্সিও তৈরি করা যায়। কন্ট্রোভার্সি তৈরির অব্যর্থ কিছু টুলস রয়েছে- স্ক্যান্ডাল, ধর্ম, রাজনীতি। উল্লিখিত ৩ টুলস এর কন্ট্রোভার্সি থেকে রেজাল্ট পাওয়া গেলেও ইমেজ সংকট তৈরি হয়, নানা ধরনের মামলা-মোকাদ্দমার তলে পড়তে হয়। তাই তুলনামূলক বুদ্ধিমান কনটেন্ট ক্রিয়েটররা কন্ট্রোভার্সির একটি নতুন টুলস তৈরি করেছে- পুরুষতন্ত্র এবং নারীবাদকে কোনোভাবে মুখোমুখি অবস্থানে আনা। টুলসটি দারুণভাবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ হুমায়ূন আহমেদের যে কোনো কমেডি নাটককে আমলে নিতে পারেন। তার নাটকগুলোতে বাড়ির কর্তা থাকেন অত্যন্ত কঠোর ধাঁচের মানুষ, তার ইচ্ছাই আদেশ, এবং স্ত্রী-কন্যাদের তেমন ভূমিকা থাকে না, রাগারাগি হজম করাই থাকে মূখ্য। পণ্ডিত এবং বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গ এসবের মধ্যে পুরুষতন্ত্রের ধ্বজা আবিষ্কার করেন, যদিও সেসব নাটক পুরোটা দেখলে ভিন্ন ব্যাখ্যাও পাওয়া যাবে অনায়াসে। মার্কেট ডিমান্ড তত্ত্বে পরিচালক কন্ট্রোভার্সির টুলস হিসেবে কী-ওয়ার্ড পুরুষতন্ত্র এবং নারীবাদ সংমিশ্রণের ফাঁদ তৈরি করেছেন, যাতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়েছে সারফেইস লেভেল বা উপরিতলে চিন্তা করা অগণিত ভেকধারী প্রগতিশীল; সন্নিবেশনটা হয়েছে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা সহযোগে।
কেমন সেটা?
আমরা ঋতুপর্ণাকে অনুশোচনায় ভুগতে দেখি, একই কামরায় থাকা প্রসেনজিতের ২য় স্ত্রী অপরাজিতা আঢ্যর মুখ দিয়ে বলানো হয় সে টিভিতে সিরিয়াল দেখে, একসময় চাকরি করতো, বাচ্চা হওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছে, খুব ছোট ছোট বিষয়ে খুশি হয়, এবং বয়সে প্রসেনজিতের চাইতে অনেকটা ছোট—- উল্লিখিত সেট আপ এ প্রসেনজিত অনুপস্থিত, যে কারণে চট করে ধরে নেয়া যাচ্ছে ক্যারিয়ারিস্টিক মেয়েদের পক্ষে সংসার করা সম্ভব নয়, সংসার স্থিতিশীল করতে হলে মেয়েদের পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের দরকার নেই, শ্বশুরপক্ষের মনোরঞ্জন এবং বাচ্চাপালনেই সুখ।—- ব্যস, সিনেমা দেখুক বা বিরত থাকুক, দু-কলম লেখাটা ঈমানি দায়িত্ব হয়ে পড়বে। তবে সেট আপ এ আমরা প্রসেনজিতকে ক্ষমা চাইতে দেখি, দ্বিধামিশ্রিত চিত্তে চিরকুট লিখতেও পিছপা হয় না, এবং তার মুখে এটাও শুনি- ‘আমাদের নিজেদের আরো বেশি সময় দেয়া উচিত ছিল’।
প্রাক্তনের স্টোরিলাইনের মূল প্রতিপাদ্য- মিসম্যাচ। যদিও শব্দটা শ্রুতিমধুর, তবে মিসম্যাচ অতি জটিলতাপূর্ণ এক কনসেপ্ট। যে কোনো কোলাবরেশন বা পার্টনারশিপে মিসম্যাচের কারণ মূলত দুটো- কালচারাল এবং পারপাসজনিত গড়মিল। মিসম্যাচ হলেও অনেকে জোড়াতালি বা গোঁজামিল দিয়ে কোলাবরেশনকে টেনে নেয়, তারা বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ দুই ক্ষেত্রেই স্থায়ী অসুখীতাকে বহন করে। যারা কম ডিপ্লোম্যাটিক এবং ইনডিভিজুয়ালিস্টিক বেশি তারা এক পর্যায়ে ক্ষান্ত দেয়, তবুও অসুখমুক্তি হয় কি?
প্রাক্তনের স্টোরিলাইনে দুটো মিসম্যাচই আমরা দেখি। প্রসেনজিত-ঋতুপর্ণার কালচারাল মিসম্যাচ এবং ভূমি ব্যান্ডের সুরজিত-সৌম্য এর কালচারাল ম্যাচিং সত্ত্বেও দুজনের উদ্দেশ্য বা ইন্টারেস্টের জায়গায় ভিন্নতা থাকায় মিসম্যাচ।
তবে কালচারাল মিসম্যাচ কথাটা কিছুটা ব্যাখ্যা দাবি করে সম্ভবত। একজন ব্যক্তি যতটুকু ব্যাসার্ধে তার জীবন অতিবাহিত করে এবং সিংহভাগ সময় অতিবাহিত করে যে পরিমণ্ডলে মূলত সেখানকার আচার-ব্যবহার, সামাজিকতা, বোধ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, খাদ্যাভ্যাস, বিনোদন, কর্মচিন্তা, মিথস্ক্রিয়া প্রভৃতি উপকরণগুলোর সমণ্বয়েই তৈরি হয় তার কালচারাল ভিত। সমস্ত উপকরণের প্রক্রিয়াজাতকরণে শেষে যেসব উপলব্ধি বা অনুসিদ্ধান্ত একজন ব্যক্তি সত্তায় ধারণ করেন সেটাই তার কালচারাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং; যার সঙ্গে কোলাবরেশনে যাচ্ছি তার কালচারাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং যদি সাদৃশ্যপূর্ণ না হয় সেটি এক আরোপিত কোলাবরেশন যেখানে ফাটল অনিবার্য, কারণ একই বোধ দুজনের কাছে পুরো বিপরীতার্থ বহন করবে। এতটা বৈপরীত্যকে ধামাচাপ দিয়ে চালিয়ে নেয়া গেলেও একটা সময়ে বিস্ফোরণ ঘটবেই।
প্রাক্তনের স্টোরিলাইনে প্রসেনজিত আর ঋতুপর্ণার কালচারাল ম্যাপিংটা যদি করা হয়? প্রসেনজিত এক রক্ষণশীল যৌথ পরিবারের ছেলে, যার তেমন কোনো বৈষয়িক অ্যাম্বিশন নেই, ট্যুরিস্ট গাইডের কাজটাই খুশি মনে করে যাচ্ছে এবং নিজের অ্যাম্বিশনহীনতাকে জাস্টিফাই করতে হেরিটেজপ্রীতি সহ নানা সুস্বাদু কারণ উপস্থাপন করে। নিজের পরিমণ্ডলে থাকা অন্যদের তুলনায় কিছুটা হয়ত অগ্রসর, তবু কালচারাল আইডেন্টিটি কি আলাদা? অ্যাম্বিশনহীন অথচ নিজের ট্যালেন্টের প্রতি মুগ্ধ, এ ধরনের মানুষের কূপমণ্ডুক না হয়ে উপায় কী?
ঋতুপর্ণার কালচারাল ম্যাপিং যদি করি। বাবার চাকরিসূত্রে বেড়ে উঠেছে অবাঙালি পরিবেশে, এবং অল্প বয়স থেকেই হোস্টেলে বা বাইরে থেকে বেড়ে উঠেছে একাকী, একই সাথে সে শিল্পমনা এবং উচ্চভিলাষী। হেরিটেজ নিয়ে সে কাজ করে। ইতিহাস-হেরিটেজে অগাধ জ্ঞান রাখা, স্বতৰস্ফূর্ত কারো প্রতি মুগ্ধতা তৈরি হতে পারে, কিন্তু সেই মুগ্ধতাকে স্থায়ী পরিণতি দিলে কালচারাল মিসম্যাচ হওয়াটা অবধারিত। মুগ্ধতার ধর্মটা কেমন? আপনি তার সাথে যতটুকু সময় কাটাচ্ছেন সেখানে মুগ্ধতার সুনির্দিষ্ট উপকরণগুলোই নার্চার হচ্ছে শুধু, কিন্তু সহাবস্থান করতে গেলে সমস্ত উপকরণ একীভূত হয়, এবং তখনই মিসম্যাচটা প্রকট হয়ে উঠে। যে কারণে ঋতুপর্ণার কালচার বলে ‘লাভ’ শব্দটা কমপ্লিমেন্ট হতে পারে, প্রসেনজিতের কালচারে লাভ এর একটাই অর্থ- রোমান্টিকতা এবং শোওয়াশুয়ি। প্রসেনজিতের কালচারে স্ত্রীর মোবাইলে মেসেজ দেখা, বা তার টিকেট করে দেয়া একই সাথে অধিকারবোধ এবং জড়তাহীনতা, ঋতুপর্ণার কালচারে দুটোই অনধিকারচর্চা, এটুকু স্পেস ব্যক্তির থাকতেই পারে। কিংবা ঋতুপর্ণার কালচারে স্বামীর জন্য শার্ট কিনে প্রাইস ট্যাগ রেখে দেয়াটা সতর্কতা, কারণ সাইজ না মিললে পাল্টানো যাবে; প্রসেনজিতের কালচারে উপার্জনশীল স্ত্রী প্রাইস ট্যাগের মাধ্যমে ঠাঁটবাট দেখাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি আচরণ এবং পরিস্থিতি যেখানে মিসম্যাচে ভরা, সেখানে আসলে কাউকেই সুনির্দিষ্টভাবে দোষারোপ করা যায় কি? কেবলমাত্র যৌনতার আকর্ষণে কি এত মিসম্যাচ উপেক্ষা করা যায়? অপরাজিতা আঢ্যের সাথে কালচার মিলেছে, কারণ সেও একই ধরনের কালচারাল অভিনিবেশ থেকে উঠেছে, এবং ফ্যামিলি পলিটিক্স সম্বন্ধে ধারণা রাখে। তার একটিমাত্র সংলাপেই পলিটিক্সটা বোধগম্য- ‘বিয়ের প্রথম ৫ বছরে শ্বশুরবাড়ির সব কথা মেনে চল, এরপর তারাই তোমার কথা মতো চলবে’। আমরা কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড না বুঝে কেবলমাত্র স্টোরিলাইন এবং সংলাপে বুঁদ থাকলে লেয়ার বা স্তরগুলো অনাবিষ্কৃতই রয়ে যায়।
প্রাক্তনের স্টোরিলাইনের সবচাইতে সিগনিফিক্যান্ট সিকুয়েন্স ট্রেনের কামরায় সকলে অন্তাক্ষরি খেলা। দুই দলে বিভক্ত হয়ে গানের কলি খেলাটা সিনেমায় কতটুকু ভ্যালু যুক্ত করলো আদতে? নিজেদের পুনরাবিষ্কার, জীবনের জার্নি উপভোগ এবং কালচারাল ব্যবধান ভুলে যাওয়া— সবই সম্ভব হয়েছে, কারণ এখানে কোনো প্রাপ্তিযোগের প্রত্যাশা নেই কিংবা মিউচুয়াল ইন্টারেস্টের স্কোপ অনুপস্থিত, যেখানে কোলাবরেশনও অপ্রাসঙ্গিক। প্রাত্যহিকতার একঘেয়েমি থেকে জড়তা কাটাতে যতরকম পন্থা হতে পারে, জার্নি তার সর্বাগ্রে, যখন মানুষ নিজের সামাজিক আইডেন্টিটি বিস্মৃত হয় সাময়িক। এটাই তাকে পুনরুজ্জীবিত করে।
প্রাক্তনের স্টোরিলাইন গতানুগতিক, তবে মিসম্যাচের উপস্থাপনে যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, এটাই পরিচালকের উৎকর্ষ।
প্রাক্তন দেখা কি সময়ের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে পারলো? হয়ত, হয়তবা নয়। তবে মিসম্যাচ বিষয়টা এত বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে প্যাকেজিংয়ের দৃষ্টান্ত দেখা যায় না সচরাচর। এটাই বা কম কিসে!