ফেসবুকে ব্লগিং শুরু করেছিলাম এবছরের ১২ই আগস্ট থেকে। সপ্তাহে ২দিন নিয়ম করে লিখতাম, এবং অপ্রত্যাশিতভাবে রেসপন্স পেতে শুরু করলাম। টার্গেট ছিলো ২০১৭ এর ১১ জানুয়ারি নাগাদ ফেসবুক ফ্রেন্ডসংখ্যা ৫০০০ এ উন্নীত করা, ১২ই আগস্টের পূর্বে সংখ্যাটা ২৫০০ এর কিছু বেশি ছিলো। লক্ষ্য পূরণ করতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রায় ৩০০ জন মানুষকে নিজে এড করেছি, এবং অবশেষে গতকাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
আমি লেখালিখি করি ক্লাশ টু থেকে। বুয়েটে পড়ার সময় লাইফের টার্গেট ঠিক করেছিলাম লেখক হবো, এর বাইরে কিছু করবো না। যে কারণে ব্লগিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়ি, ২০১৫ সালের মধ্যে ৪টি বইও প্রকাশিত হয়। তবে একটা পর্যায়ে আবিষ্কার করি, লেখালিখি আমার ফ্যাসিনেশন, প্যাশন নয়। আমার প্যাশন আসলে মানুষ আর চিন্তা করা। এই চিন্তাকেই বিভিন্ন ফর্ম এ ট্রান্সমিট করার চেষ্টা করেছি মাত্র। লেখাকে বলা যেতে পারে চিন্তা ট্রান্সমিটের অন্যতম উপায়।
আমার লাইফে এম্বিশন বলতে কিছু নেই, আমি প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই, সুখী থাকতে চাই। বস্তুবাদী হওয়ার খুব বেশি ইচ্ছা নেই বিধায় পরিচিতরা বলে ইমপ্র্যাকটিকাল। সেটাও খারাপ লাগে না। ২০১১ সাল থেকেই আমার জীবন স্তিমিত হয়ে যাওয়া শুরু করে, মনে হচ্ছিল প্রোগ্রেস নেই, ইনোভেশন নেই, অনেকটা বাঁচার জন্য বাঁচা। নিজেকে এই সময়গুলোতে ভীষণ বিরক্তিকর মনে হতো। ২০১৬ এর জুন মাসে এসে চূড়ান্ত বিদ্রোহ করে বসি। ‘প্রতিভা অপচয়’, ‘আন্ডার এচিভড’, ‘ওয়াস্টেড ট্যালেন্ট’- এইসব অভিধা জীবনে বহু সয়েছি, এভাবেই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেয়ার মানে হয় না। শেষ চেষ্টা করে দেখি। যেহেতু ১৩ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের সাক্ষাৎকার নিই আনন্দের বশে, আমার একটা এডভান্টেজ হলো বহু ধরনের মানুষের সাথে ইন্টিমেসি আছে। এমনই একজন বুয়েট০০ ব্যাচের রাইসুল ভাই। তার সাথে জীবনে দেখা হয়েছে মাত্র ২ বার, কিন্তু কথা বলে ভালো লেগেছিলো। তিনি আমাকে James Altucher এর সন্ধান দিলেন, বললেন এই লোকের সাথে তোমার পারসোনালিটি টাইপ মিলতে পারে। তুমি গভীরভাবে চিন্তা করতে পারো, আমাদের সোসাইটিতে টাকাওয়ালা মানুষের অভাব নেই, ব্রিলিয়ান্ট মানুষের অভাব নেই, কিন্তু প্রখর অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের নিদারুণ সংকট। তুমি তোমার চিন্তাশীলতাকে বেস্ট ইউটিলাইজ করার চেষ্টা করো, ভালো লাগবে, খাওয়া-পরা নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হবে না, জাস্ট চিন্তা করে যাও। আমি আমার বড় আপা ছাড়া কারো কথায় খুব বেশি ইনফ্লুয়েন্সড হই না সচরাচর, কিন্তু রাইসুল ভাইয়ের সাথেকার আলাপ আমার ৫ বছরের বিরক্তিকর জীবনকে পুরোনো ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার রসদ পাই।
বিগত ৪ মাসে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর লিখেছি। ক্রিকেট কমন ছিলো, এখনও থাকবে। আগামী দিনগুলোতে আইডিয়া বেইস, থট প্রোভোকিং, এবং সোশ্যাল ও ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে লেখার চেষ্টা করবো। ক্রিকেট আমার অন্যতম প্যাশন, তাই এই বিষয়টি বাদ যাবে না। কিন্তু বাংলা সিনেমা, মিউজিক জাতীয় ইনফরমেটিভ নোটের লেখাগুলো লিখবো না আর, আবেগনির্ভর লেখা আমি চেষ্টা করেও লিখতে পারি না, এটা আমার সীমাবদ্ধতা। যখন অনেক ভেবেচিন্তে, সময় নিয়ে লিখতাম, তখন কোট করে রাখার মতো লাইন লিখতে পারতাম। এখন লেখার পেছনে কোনো সময়ই দিই না, মন্ত্রমুগ্ধ টাইপ লাইনও আসে না আর। সেটার বিশেষ প্রয়োজনও বোধ করছি না। লেখা এখন আমার চিন্তার প্রতিনিধিমাত্র।
ফেসবুকের জন্য আমার লেখাগুলো যথেষ্ট দীর্ঘ, এ নিয়ে আমি চিন্তিত নই। লাইক বা কমেন্ট রিয়েল লাইফে কোনো কাজেই আসবে না, তার চাইতে চিন্তাসূত্রে যদি অল্প কিছু মানুষের সাথেও কানেক্টেড থাকা যায়, সেটাই আমার এচিভমেন্ট। আমার টার্গেট খুবি সিম্পল। একটা সুবিশাল হিউম্যান নেটওয়ার্ক চেইন গড়ে তোলা; এটা খুব অসম্ভব কিছু নয় মোটেই। মনের দেশে মানুষ, এটাই আমার চূড়ান্ত ট্যাগলাইন……..