এওয়ার্ড বা পদককে বলা যেতে পারে রিকগনিশন বা স্বীকৃতি। একজন মানুষ কেবল কাজ করে গেলো, কিন্তু তাকে সেভাবে এপ্রিশিয়েট করা হলো না, এটা ক্ষতিকর চর্চা। জাতিগতভাবে আমাদের মধ্যে এপ্রিশিয়েশন কালচারটা নেই বললেই চলে, কেবল বিষোদগার, অভিযোগ আর ঋণাত্মক মন্তব্য; এর মধ্যে স্পৃহা তৈরি হবে কীভাবে?

পদক ব্যাপারটা বিজনেস প্রোমোশনের জন্যও দারুণ ইফেকটিভ একটা মাধ্যম। কত শত উপলক্ষ্যে যে পদক দেয়া হচ্ছে ইয়ত্তা নেই। বিশ্বজুড়ে সবচাইতে সম্মানিত বোধহয় নোবেল প্রাইজ। অস্কার পাওয়াটাও সম্মানের। এছাড়া সেক্টরওয়াইজ পদক তো আছেই। উল্লিখিত পদকগুলোর ক্যা্নভাস এতোটাই ব্যাপক আর বিশাল যে, এগুলো অনেকটা গ্লোবাল রিকগনিশনের মতো। আমাদের দেশেও খ্যাত, অখ্যাত বহু পদক প্রচলিত আছে। সেইসব পদকপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোরাম, আইডিওলজি সহ বিবিধ ফ্যাক্টরের সম্পৃক্ত শোনা যায়। তবু, যে কোনো পদকের মূল পয়েন্ট মোটামুটি অভিন্ন: পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি রিমার্কেবল কিছু একটা করেছেন এবং তিনি স্বাভাবিকের চাইতে হলেও একটু গণ্যমান্য মানুষ।

আমার বক্তব্যের শুরুটাও গণ্যমান্যকে ঘিরে। চ্যালেঞ্জ জানানো আমার একটা মৌলিক প্রবণতা, যে কারণে সেলিব্রিটি বলতে যা বোঝায় এধরনের মানুষের প্রতি কেন যেন আমার আগ্রহ শূন্যের কোঠায়; আমার ভীষণ ভালো লাগে সাধারণ সিম্পল মানুষ, এবং তাদের জীবনযাপন, ফিলোসফি এসবের মধ্যেই বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে নিই। প্রায়ই ভাবি, নীলফামারীতে ফার্মেসী চালায় যে ভদ্রলোক, তারও হয়তোবা নিজের সার্কেলে ছোট্ট হলেও কোনো কন্ট্রিবিউশন আছে, কিন্তু আমরা সেটা জানছি না, কারণ এটা যে কন্ট্রিবিউশন এই বোধটাই নেই, এবং এজন্য এপ্রিশিয়েশনের প্রাসঙ্গিকতাও অবান্তর গণ্য করা হয়। ফলে, ফার্মেসির যে মানুষটি ছোট স্কেলে কন্ট্রিবিউট করছে এপ্রিশিয়েশন পেলে সে হয়তোবা কন্ট্রিবিউট করার মজাটা ফিল করতো, আরেকটু বড় পরিসরে কন্ট্রিবিউট করতে উৎসাহিত হতো, এবং তার দেখাদেখি আরও কিছু মানুষ তৈরি হতো। যে কোনো পজিটিভ এনার্জি চ্যানেলিং এরকম চেইন বা নেটওয়ার্ক অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়, এটারও আছে সুনির্দিষ্ট এলগারিদম। অথচ, নীলফামারীর মতো অন্য জেলা বা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষগুলো একটা জীবন পার করে দিচ্ছে যেখানে কেউ তাকে বলেইনি সে একটা এপ্রিশিয়েশন করার মতো কাজ করেছে।

আমি নিজে সিম্পল এবং মিডিওকার জটিলতাবদ্ধ এক জীবন যাপন করি, কিন্তু মানুষের প্রতি আমার নিঃসীম কৌতূহলের একটা সুরাহা তো হওয়া দরকার। আমাদের এপ্রিশিয়েশন কালচারের অভাব, এই কথা আমি বোধহয় জীবনে বহুবার বলেছি, অজস্রলেখাতে উল্লেখ করেছি, কিন্তু আক্ষরিক অর্থে কাউকে এপ্রিশিয়েট করার জন্য নিজে কী করেছি, এই প্রশ্নটা আমাকে প্রায়ই তাড়িত-বিচলিত করে। আমার থট প্রসেসের ওপর আমার তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, একের পর এক এক্টিভিটি করি এবং যুগপৎ চিন্তা করি এই কাজের পেছনে আমার ইনটেনশন কী, ফিলোসফি কী বা পারসপাস কী। ফলে, আমার যে কোনো উদ্যোগ শুরু হয় নিখাঁদ দুষ্টুমি থেকে, যেটাকে আশপাশের মানুষের উদ্ভট বা পাগলামি ভেবে যারপরনাই বিরক্ত হয়, এবং নিন্দা জ্ঞাপন করার মাধ্যমে নিজেদের অসন্তুষ্ট হওয়া কনফার্ম করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ জিজ্ঞাসা করে দেখলো না, আমার এইসব কাজ করার হেতু কী! ওই যে বললাম, এপ্রিশিয়েশন কালচারের অভাব! এপ্রিশিয়েশন এবং আপাত সিম্পল মানুষের কন্ট্রিবিউশন- এই দুটো থিমকে সমণ্বিত করে এবছর থেকে শুরু করতে যাচ্ছি ‘চিত্তচিন্তা পদক’।

চিত্তচিন্তা পদকের অধীনে প্রতিবছর ১১ জন মানুষকে সম্মানিত করা হবে। পদক প্যাকেজের অধীনে থাকবে ১টি মেডেল, একটি ক্রেস্ট, একটি সার্টিফিকেট এবং নগদ ৬৭ টাকা।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা থাকবে বিনিময়ে, সেটা হলো, তারা প্রত্যেকে যেন তার পরিচিত অন্তত ১ জন মানুষকে এপ্রিশিয়েশন পুরস্কার দেয়। এটা জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট, কেউ না দিতে চাইলে একান্তই নিজস্ব অভিরুচি।

কীভাবে চিত্তচিন্তা পদকের জন্ম হলো? যথারীতি এখানেও পাগলামি। আমি ৩ বছর ধরে একটা প্রফেশনাল ক্রিকেট টিম চালাই, যেটা রকমারি ডট কম পৃষ্ঠপোষকতা করে। এটা একটা ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের মতো। ঢাকার বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমিতে প্র্যাকটিস করা ২০ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে একটা টিম করা হয়েছে; এই টিম প্রতি মাসে ঢাকার বাইরের কোনো একটা জেলায় ২-৩ ম্যাচের সিরিজ খেলতে যায় এবং সেখানকার ভালো ক্রিকেটারদের পুরস্কৃত করে ও তাদের ইনফরমেশন প্রোফাইল সংরক্ষণ করে। এই টিম থেকে ২ জন ফার্স্ট ডিভিশন লীগে এবং ৭ জন থার্ড ডিভিশন লীগে খেলার সুযোগ পেয়েছে, এবং আমার টার্গেট একটা সময় ২০ জনই ঢাকার লীগগুলোতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করুক। টেন্ডুলকারের রিটায়ারমেন্ট উৎসব দেখার পর আমার মনে হলো, আমার চালিত ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়রাও তো একদিন অবসর নেবে, সেই দিন কবে আসবে ততদিন অপেক্ষা করার তো মানে নেই। আগাম একটা রিটায়ারমেন্ট উৎসব করলে কেমন হয়, অবসর যখন ইচ্ছা নিক। সেই চিন্তা থেকে দলের দুজন পুরনো খেলোয়াড়কে রিটায়ারমেন্টে পাঠানোর উৎসব করতে গিয়ে আমন্ত্রিত অতিথির তালিকা তৈরি করতে বসি, এবং তখনই প্রথম মাথায় আসে পদক দেয়া উচিত, আমন্ত্রিত অতিথিদের কয়েকজনকে।

পাগলামি ফেজে যখন ছিলো, তখন পদকের নাম ছিলো ‘হিমালয় স্মৃতি পদক’, অর্থাৎ জীবদ্দশাতেই আমার স্মৃতি রক্ষার্থে পদক প্রচলিত হোক। কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখলাম, পরিচিত সার্কেলে এই নামের পদক নিয়ে সবার মধ্যে ঠাট্টা-মশকরা মনোভার কাজ করলেও আমি তো আসলে এই পদকটা কন্টিনিউ করতে চাই, এবং আগামী বছর থেকে সার্কেলের বাইরের মানুষকে পদক দেবো। সেক্ষেত্রে, একটা জেনেরিক নাম হওয়া উচিত এবং এপ্রিশিয়েশনের থিমটা পাবলিকলি প্রকাশ করা উচিত। তখনই নানা পরিমার্জনা-পরিবর্ধনের মাধ্যমে ‘চিত্তচিন্তা পদক’ এর স্থায়ী হয়ে যাওয়া।

এই পদক কবে দেয়া হবে তারিখ এখনো চূড়ান্ত করিনি।সম্ভবত সেপ্টেম্বর বা নভেম্বর মাসের দিকে পদক হস্তান্তর করবো, কিন্তু যে ১১ জনকে নির্বাচিত করেছি, তাদের নির্বাচিত করার কারণ এবং পদকের নামগুলো উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় মনে করছি। উল্লেখ্য, পদকের নাম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, ফলে পরের বছর যে ১১ জন পদক পাবেন, সেগুলোর নাম হয়তোবা ভিন্ন হবে। এপ্রিশিয়েশনের জন্য সদিচ্ছা আর অনুশীলনই যথেষ্ট; বাদবাকি যা আছে সেগুলো সবই অজুহাতমাত্র।

এবার পদকপ্রাপ্তদের সম্বন্ধে কিছু লিখতে চাই, সঙ্গে প্রাপ্ত পদকের নাম:

১. নুর রহমান রুকন Nur Rahman Rukan (ক্ষুৎ-পিপাসা পদক): খুবই নির্বিকার প্রকৃতির মানুষ, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দেখে বোঝা যায় না খুশি নাকি অখুশি। স্পিরিচুয়ালিটি, জীবনের মিনিং, ইন্টারপারসোনাল রিলেশনশিপ প্রভৃতি বিষয়ে ভাবতে পছন্দ করে। জীবনে বিত্তের প্রয়োজন আছে, কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত আনন্দকে খর্ব করে নয়, এই নিরেট বাস্তব জীবনদর্শন নিয়ে এগিয়ে চলা এই তরুণকে এপ্রিশিয়েট করতে চাই, কারণ জীবনকে এতো মহিমাণ্বিত ভাবার আসলেই কিছু আছে কিনা এ নিয়ে আমার সংশয় কাটে না। লিভিং ফর এ পারপাস, এই নীতিতে যে বিশ্বাস করে তাকে এপ্রিশিয়েট করা উচিত বোধ করছি।

২. হাসান মাহবুব হাসান মাহবুব (লস্কর-ই- ব্লগ পদক): সামহোয়ার ইন ব্লগে ২০০৮-০৯ এর দিকে মারাত্মক এক্টিভ ব্লগিং করতাম। এখনো সামহোয়ার ব্লগে বোধহয় আমার ১৫০টির বেশি পোস্ট জমা আছে। সেই সময় থেকে হাসান মাহবুবকে চিনি ব্লগার হিসেবে। আমি ২০০৯ এর শেষ থেকেই ব্লগ ছেড়ে অন্যত্র আনন্দ খুঁজে নিই, পরিচিতদের মধ্যেও দেখেছি ব্লগ ক্রেজ ৬-৭ মাসের মধ্যে স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে, কিন্তু এই মানুষটি এখনো ৯ বছর আগের মতোই ডেডিকেশন নিয়ে ব্লগিং করতে চায়, তার কোনো লেখায় মন্তব্য পেলে এখনো আগের মতোই এক্সাইটেড হন। একটা মানুষ কত অল্পতে খুশি হতে পারে এই মানুষটির ব্লগিং বা অনলাইন এক্টিভিটির সাথে পরিচিত না হলে জানা হতো না। আমরা অনলাইনে তো অনেকেই কম-বেশি সময় দিই, কিন্তু এরকম গভীর আবেগ আর ভালোবাসা থেকে অনলাইনকে আপন করে নিতে পারি ক’জনে!

৩. আরিয়ান আরিফ আরিয়ান আরিফ ( জনকল্যাণ পদক): আমার একটা খারাপ অভ্যাস হলো, আমি মানুষকে নিক নেম দিতে পছন্দ করি। এই তরুণকে আমি নিক দিয়েছিলাম ‘আইকন’; আমার পরিচালিত ক্রিকেট টিমে সে-ই ছিলো প্রথম টিম ম্যানেজার, প্রায় ৬ মাস সে এই দায়িত্ব পালন করেছে। আইকন তার অনেক আগে থেকেই সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনার; পথশিশুদের নিয়ে ‘মজার স্কুল’ নামে যে এক্টিভিটি বিগত ৪-৫ বছর ধরে চালিয়ে আসছে, এটা ধরে রাখার জন্য যে পরিমাণ মানসিক ও শারীরিক শ্রম দিতে হয়, এটাকে এপ্রিশিয়েট করা উচিত। মজার স্কুল এর প্রকৃত ভলান্টিয়ার সংখ্যা আমার জানা নেই, তবু সংখ্যাটা যে খুব ছোট নয়, এটা নিশ্চিত। মজার স্কুলের এক্টিভিটির সাথে আমি ছিলাম না কখনো, এ সম্পর্কে খুব জানি তেমন দাবি করাও অযৌক্তিক হবে, তবু এটা জানি একজন তরুণ দীর্ঘদিন যাবত লেগে আছে। শর্টকাট খোঁজার চলতি ট্রেন্ডে একজন মানুষের এভাবে লেগে থাকাকে প্রশংসা করা উচিত, তার ইনটেনশন যেমনই হোক।

৪. জান্নাতুল ফেরদৌস তন্বী Jannatul Ferdous Tonwy (বায়োগ্রাফি রিডার পদক): আমি ৫ বছর ধরে চাকরির ইন্টারভিউ নিচ্ছি, প্রায় ৭০০ মানুষের জব ইন্টারভিউ তো নিয়েছিই, কিন্তু কখনো কারো সিভি দেখিনি, দেখার ইচ্ছাও নেই। ২০১৪ থেকে আমি ইন্টারভিউ দিতে আসা ক্যান্ডিডেটদের জন্য বায়োগ্রাফি লেখা বাধ্যতামূলক করে দিই, ফলে প্রচুর বায়োগ্রাফি জমা পড়ে যায়। এতো বায়োগ্রাফি পড়া আমার জন্য দুরূহ হয়ে উঠে। তাই ভার্সিটি পড়ুয়া এই তরুণীকে নিয়োগ দিই বায়োগ্রাফি পড়ে তার পারসোনালিটি প্রোফাইল তৈরি করার কাজে। এরকম স্লো-গোয়িং একটা প্রোজেক্টে একজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ নিয়ে কাজ করাটা আমার কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে। তাকে এপ্রিশিয়েট করা উচিত।

৫. জনি হক Kazi A. Hoque (খোশগল্প পদক): তিনি আমার বুয়েট জীবনের সিনিয়র, কিন্তু সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো। একজন ন্যাচারাল ট্যালেন্ট এবং স্বভাবে ভবঘুরে মানসিকতার। মাহিনের ঘোড়াগুলির ‘তাকে আমি যত তাড়াই দূরে’ গানটা ইউটিউবে খুঁজলে পাওয়া যায়, সে নিজেও গানটা কভার করেছে, এতো বেশিবার ভিউ হয়েছে যে প্রথমদিকেই তার কভার করা ভারসনটা পাওয়া যায়। গানটা একদম নিখাঁদ মনের আনন্দে গাওয়া যায়, এটা তার সাথে কথা বললে আরও ভালোভাবে অনুভব করা যায়। অথচ, গানটাও সিরিয়াসলি করে না। মাঝখানে বলেছিলাম, আড্ডাচ্ছলে গিটারে খালি গলায় করা গানগুলোই ইউটিউবে আপলোড করতে থাকেন, তাতে চর্চাটা অন্তত থাকবে। তিনি সেখানেও নারাজ। তার আসলে কী ভালো লাগে তিনি নিজেও কনফিউজড। এরকম মানুষের সাথে খোশগল্প শুরু করলে রাত পার হয়ে যাবে, কথা শেষ হবে না। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আনন্দকে স্যাক্রিফাইস করা মানুষদের ভিড়ে মুষ্টিমেয় যারা নির্মল আড্ডায় এখনো সময় দিতে আকুণ্ঠ চিত্তে সমর্পিত, আমি তাদের সম্মান জানাই।

৬. মাহমুদুল হাসান সাদী Mahmudul Hasan Sadi ( The Hypocrite soul পদক): আমাদের আশপাশে সেমি-ক্রিয়েটিভ মানুষ হিসেবে যাদের চিনি, অধিকাংশই বোধহয় অনেক কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী করবে সেটাই ঠিক করতে না পেরে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে নিজের বলয়ে। ফলে, তারা যা করে বেশিরভাগই ঘোরের বশে করে, নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হিমশিম খায়। অথচ এই মানুষগুলোর ক্যাপাবিলিটি অসীম। কেন সেই ক্যাপাবিলিটি অব্যবহৃত থেকে অপচয়ের খাতা ভারি করে, এর একটাই উত্তর পাই, সেটা হলো, নিজের সাথে প্রবঞ্চনা। এই মানুষগুলোকে যদি এপ্রিশিয়েট করা হয়, প্রায়োরিটি দেয়া হয়, কে জানে ধুন্ধুমার কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

৭. রাসেল সনেট Muhammad Rasel Sonnet ( The Golden Thief পদক): আমি বোধহয় চরম ক্যাজুয়াল একজন মানুষ,যার মধ্যে ফরমালিটিস এর লেশমাত্র নেই, আমার কাজগুলোকে পাগলামি আখ্যা দিয়ে ক্রমাগত শাপ-শাপান্ত করে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অগণিত। এর মধ্যেও কিছু মানুষ পাই যারা ক্যাজুয়াল থাকাকেই ব্রত মনে করে,এবং মানুষ নিয়ে, জীবন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয়। এধরনের মানুষগুলোকে এপ্রিশিয়েট করলে তারা হয়তো মানসিক আশ্রয় পাবে,ব্যতিক্রমের প্রতি নেশাকে চনমনে করে নিতে পারবে। এই ধরনের মানুষগুলোকে আমি বলি চোর, কারণ আমরা অন্যের জীবন থেকে মুহূর্ত চুরি করি, অভিজ্ঞতা চুরি করি, অথচ মানুষ সেটা টেরও পায় না।

৮. দেবব্রত মুখার্জী Debbrata Mukherjee(The Commitment Package পদক): আমি একজন জন্মগত ক্রিকেটপ্রেমী, এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে চাই। দেবব্রত মুখার্জী মাশরাফিকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন, এর আগে লিখেছিলেন সাকিবকে নিয়ে। তার কনটেন্ট কেমন সেটা ভিন্ন ইস্যু, কিন্তু ক্রিকেটারদের বইয়ের চরিত্র বানিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখার যে কালচার তিনি শুরু করেছেন, এটাকে আমার বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি চরম কমিটমেন্টের একটা বহিঃপ্রকাশ মনে হয়। তিনি ইতিমধ্যেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তবু তাকে এই পদক১১ তে রাখার একটাই কারণ, এপ্রিশিয়েশনটাকে পাবলিকলি স্বীকার করে নেয়া।

৯. ফাহিম শুভ্র Fahim Shuvro (অপ্রাসঙ্গিক বার্তা পদক): এই তরুণ তিন বছর ধরে আমার সাথে কানেক্টেড, কিন্তু আমার মনে পড়ে না, কখনো তার সাথে ভালো কোনো কথা বলেছি, বরং ক্রমাগত তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করেছি। কোনো ব্যাপারেই তার অগাধ জ্ঞান নেই, অথচ আগ্রহ অফুরন্ত। কনটেক্সট এর বাইরে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যও সে খুব অবলীলায় করতে পারে। এই গুণটি আমাকে মুগ্ধ করে। বিজ্ঞ ভাব না নিয়েও যে কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণের যে বিরল উৎসাহ, তা সত্যিই অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো।

১০. বিত্ত ফাইয়াজ Bitto Faiyaz(ঘাসফড়িং পদক): বিতর্ক, বিজনেস কনটেস্ট প্রভৃতি কো-কারিকুলার এক্টিভিটিতে ইতিমধ্যেই প্রচুর সংখ্যক রিকগনিশন তার ঝুলিতে আছে। তবু এই তরুণটিকে এপ্রিশিয়েট করতে চাই মূলত তার স্বতঃস্ফূর্ততা আর জড়তাবিহীন আচরণের ভিত্তিতে। নিজেকে স্থূলভাবে উপস্থাপন করেও যে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ তৈরি করা যায়, এই শিক্ষাটা তার থেকে পেয়েছি। ঘাসফড়িং পদক তার প্রতি একধরনের ট্রিবিউটও বটে।

১১. রিফাতুর রহমান সবুজ রিফাতুর রহমান (শের-ই-মিরপুর পদক): এই তরুণের সাথে আমার প্রথম পরিচয় শরিয়তপুরে ক্রিকেট টিমের ট্যুরে, সেখানে সে আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিলো। লিভ সিম্পল, থিংক সিম্পল- এই ফিলোসফি আমাকে মুগ্ধ করে। তবে তাকে এপ্রিশিয়েট করতে চাই উদ্যমের অফুরন্ততার কারণে। তাকে কাজ দেয়া হলে সেটা শেষ করা পর্যন্ত যতটা উদ্যম আর নিষ্ঠা ধরে রাখে, বয়সের তুলনায় তা সত্যিই অকল্পনীয়। এরকম কর্মপিপাসু মানুষই পূরণ করবে জনশক্তির ঘাটতি।