“আমি একটা স্যাম্পল সেট নিয়ে সামাজিকতা আর সিস্টেমের সঙ্গে গ্যাপের জায়গাগুলো খুঁজবার চেষ্টা করেছি, কখনোবা গ্যাপের মেরামতেও নজর দিয়েছি…“
গ্যাপশেডিং, মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়ের এগারোতম বই। সরলদৃষ্টিতে দেখলে বইটির জনরা সাক্ষাৎকারধর্মী, যেখানে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের ১৫ জন মানুষের সাথে আলাপ করেছেন লেখক। তবে সরল নিরীখের বাইরে হিসেব করলে একজন ব্যক্তির সাথে পেশা-প্রতিষ্ঠান-ইচ্ছা-কালচার-ভ্যালু-অনুশাসন-স্ট্যাটাস- মতবাদ প্রভৃতি নিয়ামকের গ্যাপ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হয়েছে ‘গ্যাপশেডিং’ এ, এবং এক পর্যায়ে লেখক অনুধাবন করতে চেয়েছেন যে পজিশন বা আইডেন্টিটি যা-ই হোক, সুনির্দিষ্ট সিচুয়েশনে মানুষের রেসপন্স কম-বেশি একইরকম।
সম্প্রতি এই বইটির বিষয়ে ফেসবুকে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। সেসব প্রশ্ন এবং লেখকের উত্তর নিয়েই এই সাক্ষাৎকার।
প্রশ্ন-১ঃ তথাকথিত সাক্ষাৎকার আর গ্যাপশেডিং–এর কন্টেন্টের মধ্যে তফাত কিসে?
মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়ঃ তথাকথিত সাক্ষাৎকার বলতে কী বুঝায় আমি শিউর না। তবে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারভিত্তিক বই পড়ে আমার যা পর্যবেক্ষণ সেখানকার মোটিভ থাকে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে আনা, এবং প্রশ্নে যথেষ্ট রাখঢাক বজায় রাখা হয়। গ্যাপশেডিংয়ের ক্ষেত্রে আমি ইনডিভিজুয়াল নিয়ে খুব একটা কনসার্নড ছিলাম না, আমি একটা স্যাম্পল সেট নিয়ে সামাজিকতা আর সিস্টেমের সঙ্গে গ্যাপের জায়গাগুলো খুঁজবার চেষ্টা করেছি, কখনোবা গ্যাপের মেরামতেও নজর দিয়েছি। আমার স্যাম্পল সেটে দেশ বরেণ্য কোনো ব্যক্তিত্ব ছিল না, কিন্তু তাদের চিন্তাকে আমি বরণীয় হিসেবে দেখতে চেয়েছি। এটাই হয়তবা পার্থক্য।
প্রশ্ন-২ঃ এই টাইপের আলোচনা সামনে আনার কারণ কী? মানে একেবারে বই আকারে প্রকাশ করার কী উদ্দেশ্য? বা কী আগ্রহে করা কাজটা?
হিমালয়ঃ এক্ষেত্রে দুটো কারণ ছিল। প্রথমত, আমি ফিল করছিলাম আমরা কাউকে আবিষ্কারের চেষ্টা না করে দুই-একটা রেসপন্সের ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করে ফেলি। ফলে মানুষ বিষয়ে আমরা মৌলবাদিতার পরিচয় দিই। দ্বিতীয়ত, আমি সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যক্তির কোয়ালিটেটিভ বায়োগ্রাফি লেখার প্রকল্প শুরু করেছিলাম, অর্থাৎ কর্ম বা তথ্যভিত্তিক নয় তার ইউনিক কোয়ালিটি ইলাবোরেট করে লেখা ভাবনাগ্রাফি। সেই প্রক্রিয়াতেই মনে হয় এক-একজন করে বায়োগ্রাফি করলে কটাই বা করা সম্ভব, তার চাইতে বড় সেট অব পিপল নিয়ে করি।
প্রশ্ন-৩ঃ তো সেই সেটে দেশ বরেণ্য কোনো ব্যক্তিত্ব না থাকার/রাখার কারণ কী?
হিমালয়ঃ বরেণ্যরা আবরণ রেখে কথা বলেন, নিরাবরণ হতে বিবিধ বাধা থাকে। সেইসব বাধা জয়ের ইচ্ছা জাগেনি।
প্রশ্ন-৪ঃ তো যাদের নিয়ে কাজটা করলেন তাদের বাছাই প্রক্রিয়া কেমন ছিলো? কোন দিকগুলো বিবেচনায় এসেছে সেক্ষেত্রে?
হিমালয়ঃ বেশিরভাগই স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন, মানে কাকে রাখবো কেন রাখবো নিজ থেকেই স্কেচ করেছিলাম। কতগুলো নির্বাচন হয়েছে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার মাধ্যমে।
প্রশ্ন-৫ঃ সাক্ষাৎকারের উত্তরের প্রেক্ষিতে আপনার নিজের কোনো বিশ্লেষণ কী আছে এই বইতে?
হিমালয়ঃ নাহ, একটা চিঠি আছে শুরুতে কোন হাইপোথিসিস প্রতিষ্ঠা করতে বইটা লিখলাম, এবং প্রতিটি ইন্টারভিউয়ের শুরুতে ব্যাখ্যা করেছি কেন তাকে নেয়া হয়েছে। ইন্টারভিউগুলো এত বিস্তৃত যে বিশ্লেষণের আবশ্যকতা ছিল না।
প্রশ্ন-৬ঃ বইয়ের নামটা নিয়ে বলেন… গ্যাপশেডিং শব্দযুগল কী অর্থ বহন করছে?
হিমালয়ঃ আমি সবগুলো ইন্টারভিউ শেষ করার পরে অকস্মাৎ ফিল করি ব্যক্তি ১৫ টি বিভ্রান্ত জোনাকির সাথে আলাপ করছি যাদের ফিট করা যাচ্ছে না সামাজিকতার বিলবোর্ডে; গ্যাপ একটা রয়েই যাচ্ছে। দিনের বেলায় জোনাকের মাজেজা বোঝা যায় না, অন্ধকারেই জোনাকির উৎকর্ষ; অন্ধকার শুনলেই লোডশেডিং প্রাসঙ্গিক লাগে, সঙ্গে গ্যাপচিন্তা দুইয়ের সম্মিলনে তৈরি হলো নাম।
প্রশ্ন-৭ঃ বাহ বেশ…
আপনার পুরান পাঠকরা তো জানার কথা যে আপনার কিছু অবশেসন আছে;
সাক্ষাৎকারগুলো নেওয়ার সময় কোন কোন অবশেসন এক্টিভ ছিলো? নাকি আপনি আপনার নিজের ক্যারেক্টারেই ছিলেন?
হিমালয়ঃ পাপড়িকে ভীষণ মিস করেছি। ফলে নিজের মধ্যে পুরো থাকা হয়নি।
প্রশ্ন-৮ঃ সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা বলেন…কোথায়–কবে–কিভাবে–কি উপায়ে সেগুলো নেওয়া হয়েছে? সাক্ষাতকার নেওয়ার কোনো বিশেষত্ব ছিলো কিনা…
হিমালয়ঃ
১৫ জনের মধ্যে ১ জন এর সম্বন্ধে কিছুই জানি না, হোয়াটসআপ চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আলাপচারিতা। ৫ জনের সাথে স্ট্রিমইয়ার্ডযোগে; ৪ জন মহাখালি ডিওএইচএস অফিসে এসেছিল, ১ জন আমার বাসায়, ২ জনের সাথে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে, ১ জন বড় আপার বাসায়, ১ জনের সাথে আলাপ করতে বারিধারায় গেছি— এভাবেই গুছিয়েছে সমস্তটা।
প্রশ্ন-৯ঃ একই বৈশিষ্ট্যের একাধিক পার্টিসিপেন্ট কি পেয়েছিলেন ইন্টারভিউ এর জন্য? যদি পেয়ে থাকেন তাহলে সেখান থেকে একজনকে কিভাবে বেছে নিয়েছেন?
হিমালয়ঃ মোটামুটি ৩ বৈশিষ্ট্যের মানুষ ছিল ১৫ জন।
১. স্কেপটিক
২. রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড
৩. এডভেঞ্চারাস
প্রশ্ন-১০ঃ এই গল্পকথা গোছানোর প্রক্রিয়ায় বিশেষ/অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা?
ম.স.হিমালয়ঃ যাকে সবার আগে ডক ফাইল পাঠাই সে আজ কাল করে আর কারেকশনই দেয়নি, এর বাইরে সবগুলোই প্রত্যাশিত ঘটনা।
প্রশ্ন-১১ঃ তো এই বইয়ের জন্য আপনার টার্গেট গ্রুপ কারা বলে মনে করেন? মানে কোন ডেমোগ্রাফিক বা বৈশিষ্ট্যের মানুষ এটার পাঠক হতে পারে বা হওয়া উচিত বলে মনে হয়…
হিমালয়ঃ এক বাক্যে বললে যারা মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে মজা পায় তারাই প্রাইম টার্গেট।
প্রশ্ন-১২ঃ পড়ার পর পাঠকের কেমন প্রতিক্রিয়া আশা করছেন?
হিমালয়ঃ এই ব্যাপারটাতে আমি কনফিউশনগ্রস্ত। ফিকশন পড়ে ভালো লাগা না লাগার ব্যাপার থাকে, আলাপনে প্রত্যাশাটা কী?
প্রশ্ন-১৩ঃ কোনো নির্ধারিত সেট অব কোয়েশ্চেন কি ছিলো? থাকলে কী কী?
হিমালয়ঃ আমি ২টা নিয়ামক সেট করেছি- এক, ওই ব্যক্তিকে তার নিজেরও প্রশ্ন করতে ইচ্ছা বা ব্যক্তিটিকে আরো জানবার ইচ্ছা হয়েছে কিনা। দুই, ভিন্ন কোনো ইনসাইট পেল কিনা।
প্রশ্ন-১৪ঃ সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় মূলত কোন চিন্তাটা আপনার মাথায় ছিলো?
হিমালয়ঃ সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় কোনো চিন্তাই মাথায় ছিল না। আমি শুধু তাকে শুনতে চেয়েছি।
প্রশ্ন-১৫ঃ বইয়ের কলেবর বিবেচনায় মূল্য বলছেন আনুমানিক হাজারের কাছাকাছি, দামের কারণে বই বেশি মানুষ সংগ্রহ করতে পারবে না বলে মনে হয় না আপনার?
হিমালয়ঃ দাম একটা এক্সকিউজ। কোনো কিছুর যদি চাহিদা থাকে টাকার জন্য কিনতে পারেনি এমন দৃষ্টান্ত বিরল। যার আসলেই টাকার অভাব সে ২ মাস ইন্টারনেট এর খরচ বাঁচাবে প্রয়োজনে যদি চাহিদার লেভেল সেরকম হয়। তাই বইয়ের দাম নিয়ে কখনোই চিন্তা আসে না।
প্রশ্ন-১৬ঃ বইয়ের দাম নির্ধারণে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছেন?
হিমালয়ঃ বইয়ের দাম নির্ধারণ প্রকাশকের সিদ্ধান্ত৷ আমার জিরো ইনপুট।
প্রশ্ন-১৭ঃ বিনিময়প্রথা অনুযায়ী সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের সাথে কোনো চুক্তি ছিলো কী?
হিমালয়ঃ শুধুমাত্র গৃহপরিচারিকাকে ৩০০ টাকা পেমেন্ট দিয়েছি, আর ফার্মেসিস্টিকে চাইনিজ খাইয়েছি। বাকিরা বইয়ের ক্যারেক্টার হয়েই খুশি।
প্রশ্ন-১৮ঃ সবচেয়ে বেশি কত সময় ধরে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এই বইয়ের জন্য? আর সবচেয়ে কমটাই বা কত?
এই কম–বেশি হওয়ার নিয়ামক কী ছিল?
হিমালয়ঃ সবচেয়ে কম ৫০ মিনিট; গড়ে ১০০ মিনিট। সুনির্দিষ্ট নিয়ামক ছিল না কোনো, যখন মনে হয়েছে আলোচনায় নতুন এঙ্গেল আর দরকার নেই থেমে গেছি।
প্রশ্ন-১৯ঃ এই সময়ে এসে এই ধরণের কন্টেন্টকে ডিজিটাল রূপ না দিয়ে বইয়ের মত এনালগ ফরম্যাটে প্রকাশ করছেন, এরচেয়ে পডকাস্ট হিসাবে সামনে আনার বিষয়টা ভাবলেন না কেন?
হিমালয়ঃ (প্রশ্নকর্তাকে উদ্দেশ্য করে) তোমার সাথে পডকাস্ট তো শুরু করেছিলাম৷ নিজের আলসেমিতে কন্টিনিউ করা যায়নি। বই সেদিক থেকে অনেক আকর্ষণীয় লাগে আমার।
প্রশ্ন-২০ঃ এই ধরনের বই লেখার উদ্দেশ্য কি? নিজেকে তৃপ্ত করা; নাকি নিজেকে ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার মানুষ/চরিত্র হিসেবে নিজের দ্বৈত চরিত্রের কাছে উপস্থাপন করা?
হিমালয়ঃ আমি মানুষের চিন্তাধারা সংরক্ষণ করতে পছন্দ করি, সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে বই একটি।
প্রশ্ন-২১ঃ চলমান চিন্তাধারার বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে বই লিখে আপনি কি আদতে নিজের ভাবনা যাচাই করতে চান?
হিমালয়ঃ হতে পারে নাও পারে।
প্রশ্ন-২২ঃ মানুষের চিন্তাধারা যে আপনার চিন্তাধারার সাথে সদৃশ সে ব্যাপারে আপনি কতখানি নিশ্চিত?
হিমালয়ঃ নিশ্চিত না।
প্রশ্ন-২৩ঃ তাহলে কি বলতে পারি মানুষের চিন্তাগুলোকে নয় বরং আপনি আপনার ধারণা সংরক্ষণ করছেন এই বই এর মাধ্যমে, যার পুরোটাই একটি অনির্দিষ্ট/অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। কারণ প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনের ভাবনা অনেকখানি তার পারিপার্শ্বিকতার উপর নির্ভর করে।আবার একই পেশার অনেকগুলো লোকের সাক্ষাতকার না নিলে কি গড় ভাবনা লাভ করা সম্ভব?
হিমালয়ঃ এটা এভাবে বলা যায় না। আমি কারো ব্যাপারে প্রিসেট কোনো আইডিয়া নিয়ে সেগুলো তার মুখ দিয়ে বলিয়ে নিইনি, বরং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তার ভাবনাগুলোকে একটা শেপে আনতে চেয়েছি। এমন নয় যে সে ওটুকুই ভাবে, কিন্তু সে কীভাবে ভাবে তার প্যাটার্ন অনুমানের ভিত্তি পেয়েছি। তার মানে কিন্তু এটা নয় তাকে ফরমুলাবন্দী করেছি।
প্রশ্ন-২৪ঃ অতীতে নেয়া বহু সাক্ষাতকার তো আপনার সংগ্রহে/স্মৃতিতে আছে, সেগুলোর কোনোটা ব্যবহার করার ব্যাপারে ভেবেছিলেন কী?
হিমালয়ঃ অতীতের ইন্টারভিউগুলোর মোটিভ এবারেরগুলোর চাইতে আলাদা ছিল, তাই ওগুলোকে স্থান দেয়া যায়নি।
প্রশ্ন-২৫ঃ এই বইয়ে যেহেতু মূলত আপনার প্রশ্নে অন্যের উত্তর থাকবে তাহলে তো আর এর অথারে হিসাবে কারো নাম থাকছে না মনে হয়; নিজের রোলটার কী নাম দিচ্ছেন?
হিমালয়ঃ আমি এই বইয়ের ক্ষেত্রে কনসেপচুয়ালাইজার বা প্রোডাক্ট ও’নার বলতে পারো। তবে আমি তো কেবল প্রশ্ন করে যাইনি, আলোচনাকে গন্তব্যে নিয়ে গেছি, পরিমার্জনা করেছি।
প্রশ্ন-২৬ঃ বইয়ের সূচী নির্ধারণে কোনো প্যাটার্ন ফলো করেছেন কি? নাকি র্যান্ডম ১৫টা পরপর আছে?
মানে পাঠক সিক্যুয়েন্স মেইন্টেইন না করে পড়লে কোনো সুবিধা–অসুবিধা আছে কিনা…
হিমালয়ঃ সিক্যুয়েন্স নির্ধারণে আমার কিছু থিংকিং ছিল, তবে রেন্ডমলি পড়লেও কোনো সমস্যা নাই। সিকুয়েন্স ঠিক করার ক্ষেত্রে আমি ৫ জন পাঠককে কল্পনা করে নিয়েছি, তারা কোন সিকুয়েন্স পছন্দ করছে অনুমান করতে চেষ্টা করেছি। ৫ জনের মধ্যে ৩ জন সিকুয়েন্সিংয়ের ক্ষেত্রে যেসব যুক্তি দিয়েছে কনভিন্সিং লেগেছে৷ তার ভিত্তিতে ফাইনাল কলটা আমার ছিল।
প্রশ্ন-২৭ঃ আপনি কার সাক্ষাৎকার নিতে সবচেয়ে বেশি এনজয় করছেন?
হিমালয়ঃ নরমালি যে কোনো মানুষের ইন্টারভিউ নেয়াই প্রচণ্ড এনজয় করি, নইলে একাজ করা সম্ভব না। তবে প্রশ্নটা যেহেতু কম্পারেটিভ, সেক্ষেত্রে গ্যাপশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা চিন্তা করলে সবার আগে কার কথা মনে পড়ে কল্পনা করতে চেষ্টা করলাম। ২ জনকে র্যান্ডমলি মনে পড়লো- একুশ তাপাদার আর নুসরাত জাহান মিম। সেক্ষেত্রে এই দুজনের মধ্যে টস করে একজনকে বাছাই করা যেতে পারে।
প্রশ্ন-২৮ঃ বইটাতে কেবলমাত্র একজনের ছদ্মনাম ব্যবহার করার কারণ কি?
হিমালয়ঃ সে ইন্টারভিউ দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে, আমি নিজেও তাকে চিনি না। সে সামাজিক বিচারে নিন্দনীয় কিছু বিষয়ে খোলাখুলি মতামত দিয়েছে, তাই সে নিজ থেকেই নাম-পরিচয় গোপন রেখেছে।
প্রশ্ন-২৯ঃ আপনিতো অনেক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তা শ্রেণী, পেশা এবং লিঙ্গভিত্তিক বাংলাদেশের মানুষের গড়পড়তা আচরনের মধ্যে কোন পার্থক্য কি কখনো লক্ষ্য করেছেন? যদি করে থাকেন, তাহলে আচরনগত এই পার্থক্যের প্রধান নিয়ামক (সোসাল ডাইনামিকস, আপব্রিংগ্রিং প্রসেস, ভ্যলুস এন্ড মোরাল কোড ইত্যাদি) কি আপনার মতে?
হিমালয়ঃ পার্থক্য তো অবশ্যই রয়েছে। তবে চিন্তার ধরনে আহামরি পার্থক্য হয় না, পার্থক্যটা হয় মূলত রেসপন্সের দিক থেকে। এক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে ১ নম্বরে কোনোকিছুকে রাখতে হলে ফুড হ্যাবিটকে রাখবো। মানুষ কী খেতে পছন্দ করে বা কেমন খায় আর কতটুকু ঘুমায় এই দুটো উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্যাটার্নে ফেলা যায়, তার ভিত্তিতে বাকি নিয়ামকগুলো আসে
প্রশ্ন-৩০ঃ বইপ্রেমী পুলিশ অফিসারের বদলে ভিন্ন একজনকে কেন নির্ধারণ করলেন?
হিমালয়ঃ পুলিশ অফিসার অনিবার্য কারণে তার ইন্টারভিউ প্রকাশে অপরাগতা জানান। আমি আগেই আশংকা করেছিলাম ১৫ সংখ্যাটা যেহেতু নেহায়েত ক্ষুদ্র নয়, ২-১টা স্ট্যান্ডবাই ইন্টারভিউ নেয়া ছিল। উনি সরে যাওয়ায় রিপ্লেসমেন্ট নিয়েছি।
প্রশ্ন-৩১ঃ স্ট্যান্ডবাই ইন্টারভিউ নিয়ে রাখার পর কোনটাকে বইতে স্থান দিবেন সেটির প্রায়োরিটি কিসের মানদণ্ডে নির্ধারণ করেছেন?
হিমালয়ঃ আগেই বলেছি, একটা ইন্টারভিউ ছিল হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের মাধ্যমে, ফলে সেটা ট্রান্সক্রাইবের ঝামেলা ছিল না। অন্য ২টা ট্রান্সক্রাইব করতে হত, তাতে সময় বেশি লাগত। তেইশ (লেখক কন্যা) প্রচ্ছদ করেছে বিধায় আমি বইটাকে বইমেলাতেই আনতে চেয়েছিলাম, এজন্য হোয়াটসঅ্যাপ আলাপটা প্রায়োরিটি পায়।
প্রশ্ন-৩২ঃ ইন্টারভিউয়ের সময়ে একজন অনেস্টলি উত্তর দিচ্ছে নাকি গড়পড়তা পাঠক যা শুনতে চাইছে তাই বলছে এটা কি বুঝতে পারেন?
হিমালয়ঃ পাঠক যা শুনতে চায় এমন উত্তর দিলে তারা ভীষণ বিপদে পড়ে যায়, কারণ এমন সব সম্পূরক প্রশ্ন করি যার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকে না। (প্রশ্নকর্তাকে) আপনি নিজে অনেকগুলো ক্রিকেট শো করেছেন আমার সাথে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারবেন অমন পপুলিস্ট উত্তর দেবার সুযোগ থাকে কিনা আদৌ।
প্রশ্ন-৩৩ঃ আপনার সব ধরনের লিখায় সংখ্যা একটা গুরুত্ববহ স্থান দখল করে থাকে, এইটা কি আপনি কোন মেটাফোর হিশেবে ব্যাবহার করেন ,নাকি স্রেফ হিশাবের জন্যেই প্রায়োরিটি দেন?
হিমালয়ঃ সংখ্যার মাধ্যমে কানেক্টিভিটি খোঁজার চেষ্টা করি, সে অর্থে মেটাফোরই।
প্রশ্ন-৩৪ঃ ইন্টারভিউ দাতারা কি জানতেন তাদের ইন্টারভিউ সংকলিত হয়ে বই আকারে প্রকাশ পাবে? এ বিষয়ে তাদের অভিমত কি ছিলো?
হিমালয়ঃ হ্যাঁ, বইয়ের কথা শুনেই তারা মূলত আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রশ্ন-৩৫ঃ এই বইয়ে পনের জন বাস্তব ব্যক্তির ইন্টারভিউ স্থান পাওয়াতে বইটির প্রি অর্ডার বা বিক্রি বৃদ্ধিতে কতটা এডভান্টেজ পেয়েছেন বা পেতে পারেন? ইন্টারভিউদাতারা কি কোনভাবে বইটির বিক্রি বৃদ্ধিতে প্রভাবকের ভুমিকা পালন করতে পারেন?
হিমালয়ঃ সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ যাদের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে তারা কেউ এমনকি সোস্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটিও নয়।
প্রশ্ন-৩৬ঃ যে ১৫ জনের ইন্টারভিউ নিয়েছেন এদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন যিনি নিজেকে অনেক বেশি অসুখী মনে করেন বা হতাশায় ভুগছেন?
যদি আপনার মনে হয় ঐ ব্যক্তিকে কাউন্সিলিং বা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করে তার হতাশা দূর করা সম্ভব তাহলে সেই সহযোগিতা করার কোনো চিন্তা কি আপনার আছে?
হিমালয়ঃ হ্যাঁ ডিপ্রেসনে ভুগেন এমন ২ জন ছিল, তাদের ১ জনকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু তার নিজের ইচ্ছার কমতি প্রচুর।