উপার্জন ডায়েরি-১
যখনই নতুন কোনো ব্যক্তির সাথে আলাপ হয় একটা ব্যাপার লক্ষ্য করি; প্রায় প্রত্যেকেই দ্বিধাগ্রস্ত আমার উপার্জন প্রক্রিয়া নিয়ে। অর্থাৎ আমি কীভাবে চলি, অপার বিস্ময় কাজ করে। বিস্ময়টা আমাকেও ভাবায়, চিন্তা এক্সপ্রেস নামের বইটা সে সংক্রান্ত ভাবনারই রূপায়ণ।
তবে অনলাইনে কিছু পড়ার সাথে বিস্তর পার্থক্য বই কিনে পড়ার।
তাই
বিক্ষিপ্ত ভাবনা শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্ব আকারে আসবে হয়তবা।
যেমন আজ সন্ধ্যা থেকেই ‘কনজ্যুমার বিহেভিয়ার ইনসাইট’ সার্ভিসটা নিয়ে বলার আগ্রহ কাজ করছে।
বায়োপিক এনালিস্ট হিসেবে নানা কিসিমের কাজই করতে হয় আমাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজ শুরুর বেশ কিছুদিন পর ঠিক হয় কী করতে হবে।
তার আগ পর্যন্ত নির্দোষ নিশ্চুপ পর্যবেক্ষণেই কেটে যায় অনেকটা সময়।
এরকম ফ্লেক্সিবিলিটিটা পাই কীভাবে?
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যখন সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের প্রস্তাব দিই স্বল্পস্থায়ী বা সাময়িক চিন্তা না করে একটু দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টি দিতে। এককালীন টাকা না দিয়ে ৬ মাস বা ১ বছর মেয়াদী বিনিয়োগ করতে আমার চিন্তা বা ক্রিটিকাল এনালাইসিস এবিলিটির উপর। যারা রাজি হয় না তাদের চিন্তা আলাদা, যারা হয় তারা কী ভাবে আসলে?
ধরা যাক সে হয়ত উক্ত প্রকল্পের জন্য দুই বা আড়াই লাখ টাকা বিল দিত। কিন্তু টাকাটা একবারে না দিয়ে মাসিক ভিত্তিতে মোট ১২ মাস ধরে দিলে উভয়পক্ষের জন্যই উপকারী হয়, ইউটিলিটি বাড়ে। একবারে লাখ টাকা খরচ করতে গেলে অনেক কিছুই মনে হয়, কিন্তু মাসে ১৫, ২০ বা ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা দুরূহ কিছু নয়, একজন সাধারণ মানের এক্সিকিউটিভের বেতন বড়োজোর; ওইটুকু বিনিয়োগের বিপরীতে বছরমেয়াদী চিন্তা ও আলোচনার প্যাকেজ। এটাই আমার এবং অপরপক্ষের ব্রিদিং স্পেস হিসেবে কাজ করে, এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আমিও এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্লায়েন্ট না বলে অভিহিত করি ‘পৃষ্ঠপোষক’ কিংবা ‘কোলাবরেটর’।
শেষ ৪ বছরে যত ধরনের কাজ করেছি পছন্দের ক্রমানুসারে সাজালে শীর্ষ তিনে থাকবে
১. হিউম্যান অডিট ইনসাইট
২. কনজ্যুমার বিহেভিয়ার ইনসাইট
৩. কালচারাল এলাইনমেন্ট ইনভেস্টিগেশন/এথনোগ্রাফি
এর মধ্যে ২ নম্বরটিই সর্বাধিক আনন্দদায়ক।
কী করি আদতে? প্যাটার্ন তৈরির চেষ্টা করি। মার্কেট রিসার্চ বা মার্কেট স্টাডি ধরনের কাজগুলো প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই করে থাকে, সমীক্ষা বা সার্ভে পরিচালনা শেষে সেখান থেকে ফাইন্ডিংস এবং রেকমেন্ডেশন তৈরি করে।
আমার পর্যবেক্ষণ এবং অনুসিদ্ধান্ত হলো, এটা প্রাথমিক স্তরের অনুসন্ধান। মার্কেট নয় আদতে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং কনজ্যুমার বিহেভিয়ার নিয়ে ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক পর্যালোচনা থেকেই ডিসিসন মেকিং ইনপুট তৈরি হয়।
মার্কেট রিসার্চের সাথে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স অথবা কনজ্যুমার বিহেভিয়ারের পার্থক্যটা প্রসেসিং এপ্রোচে, যেখানে সার্ভে রিপোর্টের উপর আস্থা সর্বোচ্চ ১০%, বাকিটা আসে রেন্ডম স্যাম্পলিংয়ের সাথে রেন্ডম ডিসকাসন থেকে, যেখানে একজন ব্যক্তি কী বলছে তার চাইতে কী বলছে না সেই মিসিং ডটগুলো কোরিলেট করেই তৈরি হয় এন্টারপ্রেটেশন, এবং ইনসাইট। অগণিত সংখ্যক মানুষের সাথে গল্প করার পরে এখন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে পড়েছি মানুষকে প্রশ্ন করে, হোক সেটা মৌখিক অথবা লৈখিক, কাঙ্ক্ষিত উত্তর মেলে কদাচিৎ, প্রশ্নের মধ্যে সঙ্গতি কম রেখে রেন্ডম উত্তরগুলো মেলালে মিসিং লিংক থেকে প্যাটার্ন একটা তৈরি হয়ে যায়। এজন্য মার্কেট রিসার্চ অপছন্দ করলেও কনজ্যুমার বিহেভিয়ারের কেইস স্টাডিগুলোসূত্রে প্রতিনিয়ত নতুন উপলব্ধির সাথে পরিচিত হওয়ার প্রেক্ষাপট ঘটে।
আমার কাজের ক্ষেত্রে দুটো গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
প্রথমত, পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষক বা কোলাবরেটরের অভাব। ব্যতিক্রমী চিন্তার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুব বেশি পাই না যারা আমার মডেলে কাজ করতে আগ্রহী। সম্ভবত ইউটিলিটি বোঝাতে ব্যর্থ হই নিজের সেলসম্যানশিপ অদক্ষতায়।
২য়ত, পৃষ্ঠপোষক অপর্যাপ্ত হওয়ায় শিক্ষানবিসও রাখতে পারি না দীর্ঘমেয়াদে। দেখা গেল এখন প্রচুর কাজ করছি, কয়েক মাস পরেও নতুন পৃষ্ঠপোষক যুক্ত হলো না, যে কারণে শিক্ষানবিসদের দেয়ার মতো কাজ থাকছে না। পৃষ্ঠপোষক বৃদ্ধি পেলে ইচ্ছা রয়েছে ঢাকায় ৫ জন, এবং অন্য জেলাগুলোতে ২ জন হারে শিক্ষানবিস নিয়ে এক সুবিস্তৃত হিউম্যান নেটওয়ার্ক চেইন তৈরি করার।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নিশ্চিত হয়েছি চাকরি এবং ব্যবসা কোনোটাই আমার জন্য উপযুক্ত উপার্জন মাধ্যম নয়, বরং এনালিটিকাল এবিলিটি এবং ইমাজিনেশন দিয়ে স্বাধীন পেশাজীবী হওয়ার মাধ্যমেই হয়তবা সম্ভব বেটার কন্ট্রিবিউশন নিশ্চিত করা।
আরো বিচিত্র অভিজ্ঞতা আসুক।।