আমার বিশ্বাস আমি একজন উদ্যোক্তা টাইপ মানুষ। ১১ বছর বয়স থেকে শুরু করে বয়স ৩০ হওয়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী ২০ বছরে আমি ২২টা উদ্যোগ নিয়েছি; তার বেশ কয়েকটা এখনো টিকে আছে, অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে। ২২ সংখ্যাটা খুব বেশি হয়তো নয়, তবু নিজেকে উদ্যোক্তা মনে করতে ২২ একেবারে কমও নয় সংখ্যা হিসেবে।

সাধারণত, আমি এনালাইটিক লেখা লিখি, অনেকে মন্তব্য করেন, এর বাইরেও প্রচুর মানুষ আছেন যারা পড়েন কিন্তু মন্তব্য করেন না। আমার লেখাগুলো দীর্ঘ হয় সাধারণত, তবু যারা পড়েন তাদের ধন্যবাদ। এই লেখাটিতে এনালাইসিস খুবই কম, প্লেইন বর্ণনা বেশি এবং সাবজেক্ট-ম্যাটার পুরোটাই ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড। তাই কষ্ট করে বাকি লেখাটুকু পড়বেন কিনা সেটা আপনাদের অভিরুচি, আমি আমার অবস্থানটা স্পষ্ট করলাম। ফেসবুক প্রোফাইল যেহেতু ব্যক্তিগত এলবামের মতো (আমি অবশ্য প্রাইভেসি তত্ত্বে বিশ্বাসী নই সেভাবে, ট্রান্সপারেন্সিতেই মজা পাই), এই লেখাটি লিখছি আসলে নিজের কাছে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে। কারণ, জীবনের ২৩ নম্বর যে উদ্যোগটা আমি নিয়েছি সেটা ব্যবসায়িক উদ্যোগ, পূর্বের ২২টির ২১টিই ছিলো নিছক আনন্দের থেকে নেয়া। বিজনেস এর প্রাক্কালে এক মুহূর্তে নিজের উদ্যোক্তা মনোভাবটা রিভিউ এবং কিছুটা রিভিল (যাদের উৎসাহ আছে শুধুমাত্র তাদের জন্য প্রযোজ্য) করার তাগিদ থেকেই এই লেখার অবতারণা।
আমার ব্যবসায়িক উদ্যোগের নাম HumanLabBd; এটা পুরোটাই ইন্টেলেকচুয়াল সাপোর্ট টাইপ বিজনেস। এই লেখায় এ ব্যাপারে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই, পূর্বের ২২টি নিয়ে লিখতে গেলেই শব্দের দৈর্ঘ্য বিশাল হয়ে যাবে।
আমার উদ্যোগগুলো টাইপের দিক থেকে খুব কাছাকাছি; বেশিরভাগই মানুষ নিয়ে, যেহেতু মানুষ আমার খুবই পছন্দের সাবজেক্ট, জীবনের যাবতীয় কৌতূহলও আবর্তিত হয় এই মানুষকে ঘিরেই। তাই বৈচিত্র্যপ্রত্যাশীরা আমার উদ্যোগে বৈচিত্রহীনতা দেখে হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। তবু লিখি, বৈচিত্র্য থাকে আমাদের কল্পনায়, বাস্তবে তার দেখা মেলে কদাচিৎ।

 

উদ্যোগ    ১  :      সাধারণ মানুষের উদ্ধৃতি সংগ্রহ করা – এটা আমার জীবনের প্রথম উদ্যোগ, যা এখনো সচল রয়েছে। আমি যখন ফোর-ফাইভে পড়ি তখন থেকেই বুঝতে পারি মানুষের কথা শোনার প্রতি আমার এক ধরনের দুর্বলতা আছে, এবং কারো কোনো পার্টিকুলার কথা ভালো লেগে গেলে সেটা মনে রাখার চেষ্টা করতাম। এভাবেই শুরু। তারপর সিক্স এ উঠার পর ভালো লাগাটাকে একটা শেপ এ আনার চেষ্টা করি। যার যে কথাটা পছন্দ সেটা খাতায় লিখে পাশে উদ্ধৃতিকারীর নাম লিখে রাখতাম। আমার মনীষীদের বাণীর প্রতিও ফ্যাসিনেশন জন্মে, কিন্তু আমি আবিষ্কার করি মনীষীদের চাইতে সাধারণ মানুষের কথাগুলোই বেশি এট্রাক্ট করে আমায়। বুয়েটে ঢোকার পূর্ব পর্যন্ত আমার ডায়েরিতে এরকম প্রচুর উদ্ধৃতি ছিলো। আমার হল ছাড়াটা একদম অতর্কিত হয়েছে, হুট করে কর্তৃপক্ষ বের করে দিয়েছে। ফলে আমার জীবনের প্রচুর মূল্যবান রিসোর্স আমি হারিয়ে ফেলেছি। যাহোক, বুয়েট ছাড়ার পরও মানুষের কোনো কথা পছন্দ হলে সেটা মনে রাখি, বিভিন্ন লেখায় সেগুলো ব্যবহারও করি (কার্টেসি উল্লেখ করি অবশ্যই), কিন্তু কথাগুলো কোথাও সংরক্ষণ করার ইচ্ছা হয় না। তবে খুবই আনন্দ পাই এই উদ্যোগটায়।

উদ্যোগ   ২   :       চকলেট বক্সে মাকড়সা পালন –  সিক্স এ পড়ার সময় আমাদের পাশের বাসার এক আন্টি জন্মদিনে এক বক্স চকলেট উপহার দিয়েছিলেন। সেই বক্সটাকে কীভাবে বেস্ট ইউটিলাইজ করা যায় এই চিন্তা থেকেই অদ্ভুত আইডিয়া মাথায় আসে। বক্সের ভেতরে শলাকা ঢুকিয়ে কাঠামো নির্মাণ করে সেখানে ৬-৭টা মাকড়সা ছেড়ে দিই। মাকড়সা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই জাল বিস্তার করে পুরোদস্তর বাসা বানিয়ে ফেলে। প্রায় ৩-৪ মাস স্থায়ী হয়েছিল এই উদ্যোগ। মাকড়সার খাবার হিসেবে মশা, মাছি, পিঁপড়া, আটা প্রভৃতি দিতাম। এই কাজে এতোটাই অবসেশনড হয়ে পড়ি যে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে এই অভিযোগে আম্মু খুব বকাঝকা করে, সেই চাপে একসময় বক্স ফেলে দিতে বাধ্য হই। আমাদের মাকড়সা পালনেরও সমাপ্তি ঘটে।

উদ্যোগ   ৩   :     ইএমএলসি (লাইব্রেরি) –  ক্লাস সেভেন এ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হই। তাদের বই পড়া কার্যক্রমে স্কুল শাখায় আমি ছিলাম প্রধান কর্মী। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কনসেপ্ট এ মারাত্মক প্রভাবিত হয়ে আমিও একটা উদ্যোগ নিই যার নাম রাখি ইস্টার্ন মডার্ন লিটারেচার সেন্টার (ইএমএলসি)। যদিও আইডিয়া মৌলিক নয়, কিন্তু এটাই আমার জীবনের প্রথম ম্যাচিউরড উদ্যোগ। আমি সেই বয়সেই সীল প্যাড বানিয়েছিলাম, কার্ড সিস্টেম চালু করেছিলাম, ১০ টাকা মান্থলি ফি এর বিনিময়ে বন্ধুদের বই ধারও দিতাম। কিন্তু বইগুলো বেশিরভাগই ছিলো বড় আপার, ফলে স্কুলে থাকা অবস্থায় এর কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি বড় আপার ভয়ে। বুয়েটে হল লাইফে নিজে প্রচুর বই কিনতে শুরু করি, তখন ইএমএলসি আবারো শুরু করি এবং প্রচুর পরিমাণ বই গচ্চা দিই; মানুষ পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেয়নি।

উদ্যোগ   ৪   :    ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট এবং টুর্নামেন্ট আয়োজন –  ক্রিকেট নিয়ে আমার প্যাশন ভয়ানক পর্যায়ের। স্কুল লাইফের প্রায় পুরোটাই ক্রিকেট খেলার পেছনে ব্যয় করেছি। তবে রেগুলার টাইপ ক্রিকেটের চাইতে ভিন্ন টাইপ ক্রিকেটে মজা পেতাম বেশি। যেমন: ৩ স্ট্যাম্পের পরিবর্তে ২ স্ট্যাম্প ব্যবহার করা এবং ২ স্ট্যাম্পের মধ্যবর্তী দূরত্ব একটা ব্যাটের দৈর্ঘ্যের সমান, এত বড় জায়গা ব্যাটসম্যানকে কাভার করতে হতো এবং এর মধ্য দিয়ে বল ঢুকলে ব্যাটসম্যান আউট, তার আগ পর্যন্ত সে যতক্ষণ পারে খেলবে। এই স্টাইলের খেলাটা আমাদের মধ্যে খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, এমনকি বয়সে সিনিয়ররাও আমার এই ফরম্যাট অনুসরণ করে খেলতে আরম্ভ করে।আরেকটা কাজ খুব নিয়মিত করতাম, সেটা হলো অন্য ক্লাস বা অন্য এলাকার সঙ্গে খেলা এরেঞ্জ করা, আমি নিজে কয়েকটা টুর্নামেন্টও আয়োজন করেছি। ক্রিকেট নিয়ে ছেলেবেলার সেই ফ্যাসিনেশনকে আমি বড়বেলায় আরও ম্যাচিউর একটা উদ্যোগে কনভার্ট করেছি। ক্রমাণ্বয়ে সেটাও আসবে।

উদ্যোগ   ৫    :    ” নারী বিরোধী সংস্থা (নাবিস)”  এটাই আমার জীবনের একমাত্র উদ্যোগ যা ১০ বছর স্থায়ী ছিল এবং যেটা শুরু করা এবং শেষ করা, দুটো কারণেই ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছি, আমাকে দেখা হয়েছে ভণ্ড একজন মানুষ হিসেবে। গৌতম বুদ্ধের জীবনী পড়ে ১৩ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৩০ বছর বয়স হয়ে গেলে সংসার পুরোপুরি ত্যাগ করবো, এজন্য মায়া, আবেগ, বয়সজনিত কাম প্রভৃতি থেকে দূরে থাকবার সংকল্প নিয়েছিলাম। তার প্রেক্ষিতেই সংকল্প করেছিলাম জীবনে প্রেম করবো না, বিয়ে করবো না। এইটে উঠার পর দেখলাম বন্ধুদের মধ্যে মেয়েদের ব্যাপারে ভিন্নরকম কৌতূহল তৈরি হচ্ছে, আলোচনার টপিক বদলে যাচ্ছে। সেই স্রোতকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে একটা সংগঠন করি, যার নাম দিই নারী বিরোধী সংস্থা, সংক্ষেপে নাবিস। এর একটা এন্টি-সংগঠন ছিলো নারী প্রীতি সংস্থা, ওরফে নাপ্রীস। এই সংগঠনের কঠিন নিয়ম-নীতি ছিলো, সাংগঠনিক পদ ছিলো; সভাপতি, সহসভাপতি, প্রচার সম্পাদক, সাধারণ সদস্য। আমরা সদস্য সংগ্রহের আগে নিয়মগুলো স্ট্রিক্টলি বলতাম, নিয়ম ভাঙলে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করতাম। বুয়েট ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত আমি খুবই স্ট্রিক্ট ছিলাম, কিন্তু ফার্স্ট এয়ারে গিয়ে ওয়ানসাইডেড মোহে পড়ে আমি প্রথম আদর্শচ্যুত হই এবং ফাইনাল ইয়ারে উঠে সংগঠন বিলুপ্ত করে দিই। এটা নিয়ে বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠমহলে প্রচণ্ড বিদ্রুপের শিকার হয়েছি, একবাক্যে সবাই আমাকে ‘ভণ্ড’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের কথাকে ডিফেন্ড করার কিছু নেই, আমি সত্যিই এক্ষেত্রে ভণ্ডামি করেছি, তবে এই সংগঠনটি আমার সাংগঠনিক স্কিল বাড়াতে অনেক কাজে এসেছে।

উদ্যোগ     ৬     :     স্টাডি ক্লাব – এটার শুরু ক্লাস সিক্স থেকে এবং ক্লাস টেন পর্যন্ত এটা স্থায়ী ছিলো। খেলাধুলা আর এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির বাইরে যতটুকু সময় বাসায় থাকতাম, পুরোটাই পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করতাম। আমার পড়ার ধরনটা ছিলো একটু অদ্ভুত। চেয়ারকে টেবিলের সাথে বেঁধে রাখতাম, এরপর অন্য একটা দড়ি দিয়ে নিজেকে চেয়ার-টেবিলের সঙ্গে বেঁধে ফেলতাম, যাতে পড়ার সময় অন্য কোনো কাজে ডাকলে সহসা উঠতে না হয়। এই স্টাইলটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গল্পের বিষয় হয়ে উঠে, আমি আমার ক্লাসমেট এবং জুনিয়র অনেকের বাসায় গিয়েই চেয়ার টেবিল বেঁধে দিয়ে এসেছি, তাদের কারো কারো অভিভাবক আমাকে পাগল বলেছে এজন্য। তবু এই থিমটা আরেকটু মোডিফাইড হয় নাইনে উঠার পর। আমি পেছেনের দিকের স্টুডেন্টদের নিয়ে একটা ক্লাব বানাই, যেখানে ফ্রিহ্যান্ড ইংলিশ রাইটিং, ম্যাথ পরীক্ষা, ইংরেজি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতো। আমিই প্রশ্ন তৈরি করতাম, আমিই খাতা দেখে দিতাম, আমার ফি ছিলো এক কাপ চা। টেনে উঠার পর এই ক্লাবটা আরও বেশি একটিভ হয়ে উঠে। টেস্ট পরীক্ষার পর এই ক্লাব ইনএকটিভ হয়ে পড়ে।

উদ্যোগ     ৭   :     কুইজ ও ডিবেট ক্লাব: এই ক্লাবটা প্রায় ৩ বছর একটিভ ছিলো। নাম দিয়েছিলাম ‘রাইজিং সান’। কোনো ক্লাসে স্যার অনুপস্থিত থাকলে বা স্যারের পড়াতে ভালো না লাগলে পুরো ক্লাসটা আমি কুইজ কম্পিটিশন পরিচালনা করতাম, বা ডিবেট আয়োজন করতাম। এই এক্টিভিটি শুধু ক্লাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না, আন্তঃস্কুল এবং ক্লাশের বাইরেও সেটা অর্গানাইজ করেছিলাম। আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে কুইজ কনটেস্ট, ডিবেট কনটেস্ট এর পুরস্কার দিয়েছিলাম। টেস্ট পরীক্ষা চলে আসার পর রাইজিং সান অস্তমিত হয়ে যায়।

উদ্যোগ     ৮  :      ” ইন্টারভিউ(খোশগল্প.কম)”    আমার জীবনের সবচাইতে আনন্দদায়ক উদ্যোগ, যা এখনো চলছে, সবমিলিয়ে ১৭ বছর ধরে চলছে, এবং চলবে আশা করি। ক্লাশ এইট থেকে আমি মানুষের ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করি, ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ধরনের মানুষের ইন্টারভিউ নিতাম। ২০১১ সালে বুয়েটে পড়াকালে চিন্তা করি ইন্টারভিউগুলো রেকর্ড করে রাখবো, একটা ওয়েবসাইট করার প্ল্যান করি। uncommonlife নামে ডোমেইন কেনা হয়, সাইট ডিজাইন করা হয়, কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক সাইট আর আলোর মুখ দেখে না। ২০১৫ তে নতুন করে সাইটের কাজ শুরু করি, এবার নাম রাখি খোশগল্প.কম। এটা নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই , সাইটের লিংক দিচ্ছি, ওটা একটু ঘুরে দেখলেই বিস্তারিত জানা ও বুঝা যাবে। www.khoshgolopo.com

উদ্যোগ     ৯    :      হাতের লেখা সংগ্রহ করা –  আমার হাতের লেখা খুবই বাজে, এ নিয়ে জীবনে কম হেনস্তা হতে হয়নি। ক্লাশ টেন পর্যন্ত আম্মু যেখানে যার সুন্দর লেখা পেয়েছে আমাকে তার লেখার উপর হাত ঘুরিয়ে লেখা প্র্যাকটিস করতে হয়েছে। একারণে সম্ভবত মানুষের হাতের লেখার প্রতি আমার এক ধরনের ফ্যাসিনেশন ছিলো। নাইনে উঠার পর এটা নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করতে শুরু করি, যেখানে যাকে পেয়েছি তার হাতের লেখা কালেক্ট করেছি। বুয়েট সেকেন্ড এয়ার পর্যন্ত এটা জারি ছিলো, এই ৫ বছরে আমি প্রায় ৫০০ জন মানুষের হাতের লেখা সংগ্রহ করেছি। হল থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময় আমার যেসব রিসোর্স হারিয়েছি, তার মধ্যে এটাও একটা।

উদ্যোগ     ১০    :    জন্মদিন সংগ্রহ করা – হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমায় ফেরদৌসের এক্টিভিটি দেখে স্কুল লাইফে খুবই প্রভাবিত হয়েছিলাম, সিনেমায় সে জন্মদিন কালেক্ট করতো এবং উইশ করতো। আমিও এই উদ্যোগটা নিই এবং প্রায় ৬ বছর চালাই। আমি প্রত্যেককে জন্মদিনে উইশ করতাম। আমার টার্গেট ছিলো বছরের ৩৬৫ দিনই যেন পরিচিত কারো না কারো জন্মদিন থাকে, এরকম কন্ডিশন তৈরি করা। সে লক্ষ্যে কাজও করেছি, ১৭০ দিনের মতো কভার করতে পেরেছিলাম, এরপর আর চালাতে পারিনি অন্যদিকে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায়। আসলে মৌলিক উদ্যোগ না হওয়ায় এটা নিয়ে বোধহয় খুব একটা ফ্যাসিনেটেড ছিলাম না।

উদ্যোগ      ১১       :      ” আপনভুবন (বায়োগ্রাফি)” – এই উদ্যোগটা শুরু করি নটরডেম কলেজে ফার্স্ট ইয়ার এ ভর্তি হওয়ার পর। এটা এখনো চালু আছে এবং চলবে আশা করছি। আমার কাছে জব ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন এরকম মানুষমাত্রই জানেন আমি তাকে আত্মজীবনী লেখার এসাইনমেন্ট দিই। আত্মজীবনী পড়ে আমি তার পারসোনালিটি টাইপ বুঝার চেষ্টা করি। এমনকি আত্মজীবনী পড়ার জন্য একসময় একজনকে চাকরিও দিয়েছিলাম; এতো জীবনী জমা হয়ে গিয়েছিল। মুলত এটার ইনস্পাইরেশন এসেছে কলেজ লাইফের সেই ‘আপন ভুবন’ নামের উদ্যোগ থেকে। একটা ডায়েরিতে একজন মানুষ তার নিজের জীবন-ভাবনা নিয়ে ৬-৭ পৃষ্ঠা লিখতো, একই ডায়েরিতে ৩০ জনের আপনভুবন ছিলো। একজন লিখতে গিয়ে আরেকজনেরটা পড়তো, ফলে একটা ইন্টারনাল কমিউনিকেশন ডেভেলপ করতো। এটাও হল ছাড়ার সময় হারিয়ে ফেলেছি, তবে কনসেপ্ট এখনো টিকে আছে। তারই ফলশ্রুতিতে এখন চাকরি ক্ষেত্রে বায়োগ্রাফি লিখতে দিই।

উদ্যোগ     ১২        :     “চেস ক্লাব” – এই উদ্যোগটা নটরডেম কলেজের ২ বছর টিকে ছিলো। কলেজে উঠে আমি একাডেমিক পড়াশোনা থেকে পুরোপুরি মনোযোগ হারিয়ে ফেলি, কেন যেন মনে হয় পাঠ্যপুস্তক পড়ে জীবনবোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই কলেজের ২ বছর প্রায় পুরোটাই আমি দাবা খেলে কাটিয়েছি, এবং সেটা ক্লাসে বসেই। স্যাররা টের পেত না। এমনকি এসময় ১০ টাকা করে এন্ট্রি ফি নিয়ে ২ বছরে ২টা দাবার টুর্নামেন্টও আয়োজন করেছিলাম। দাবা খেলাসূত্রেই বন্ধুত্ব হয়েছে এরকম বন্ধুও আছে বেশ কয়েকজন। বুয়েটে গিয়ে চেষ্টা করেছিলাম আরেকটা চেস ক্লাব গড়ে তোলার, কিন্তু কলেজের মতো বুয়েটে অত বড় সার্কেল পাইনি, যে কারণে চেস ক্লাব আর কন্টিনিউ করা সম্ভব হয়নি। আসলে আমার ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের কারণে আমাকে কম ভুগতে হয়নি। বুয়েটে চেস ক্লাব ছিলো, নটরডেমেও ছিলো, কিন্তু আমি সেসব ক্লাবে যাওয়ার সাহস পাইনি, নিজেই ক্লাব গঠন করেছি। ইন্ট্রোভার্ট না হলে হয়তোবা এই বাড়তি ঝামেলাটা নিতে হতো না। অবশ্য ইন্ট্রোভার্ট মানুষ এতোগুলো উদ্যোগ নেয়াটাও কেমন খটকা লাগে;সবমিলে আমার চরিত্রে স্ববিরোধীতা অনেক বেশি।

উদ্যোগ      ১৩      :    “ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব” –  ইন্টারে পড়ার সময়ই সিদ্ধান্ত নিই জীবনে ৭টা বিদেশী ভাষা লিখবো। সে লক্ষ্যে বুয়েটে গিয়ে অলিয়স ফ্রসেস এ ফ্রেঞ্চ এ ভর্তি হই, তিনটা সেমিস্টার কমপ্লিট করি। এশিয়ান শিল্প ও সাহিত্য সভায় সলিমুল্লাহ খানের তত্ত্বাবধানে সুইডিশ শিখি। এছাড়া, এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জার্মান শেখা শুরু করি। এইসব ভাষা শিক্ষার কারণে পরিচিতদের নিয়ে একটা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব চালু করি। সদস্যসংখ্যা খুব বেশি ছিলো না, ৫-৭ জনের মতো, কিন্তু উদ্যোগটা প্রায় ২ বছর টিকে ছিলো। কিন্তু ২০০৮ এ ব্লগিংয়ের নেশা পেয়ে যাওয়া, এবং অনুবাদের প্রতি অতিরিক্ত ফ্যাসিনেটেড হয়ে পড়ার দরুণ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবকে আর চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

উদ্যোগ     ১৪        :       “ক্ষুদ্র অনুদান” – এটা আমার জীবনের অন্যতম ইনফ্লুয়েন্সিয়াল উদ্যোগ যা এখনো টিকে আছে। শুরু করেছিলাম বুয়েট ফার্স্ট ইয়ারে। একুশে বইমেলার সময় বই কেনার জন্য প্রচুর টাকার দরকার, কিন্তু এতো টাকা পাব কোথায়। তখনই অদ্ভুত এক আইডিয়া মাথায় এলো। ধরা যাক, আমার ৫০০০ টাকা দরকার, একজনের কাছে চাইলে এই টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু ৫০ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে যদি ১০০ টাকা করে নেয়া হয় এই টাকা ম্যানেজ হওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। সেই চিন্তা থেকেই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির বন্ধু, ঘনিষ্ঠ সিনিয়র সবার কাছ থেকে ১০০ টাকা করে অনুদান নেয়া শুরু করি এবং টাকা পেয়ে যাই। অনুদান দাতাদের একটাই শর্ত, আমার বইয়ের ডোনার লিস্টে তাদের নাম যেন থাকে। ২০১২ সালে বুয়েট ছাড়ার পরও এই উদ্যোগ সচল আছে। জানুয়ারি মাস এলেই আমি ক্ষুদ্র অনুদান সংগ্রহের মিশনে নামি। এখন আর আগের মতো পাই না, এটা নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করে যে আমি এখনো মানুষের কাছ থেকে ১০০ টাকা অনুদান নিই, এটা ছেলেমি ব্যাপার হয়ে যায়। আমি তবু থামি না, এই উদ্যোগ চলবে। এটা নিয়ে অসংখ্য স্মৃতিও আছে। আমি তাহমিনা আনামের গোল্ডেন এজ বইটা কিনেছিলাম ক্লাসের ৩১ জনের কাছ থেকে ১০ টাকা করে অনুদান নিয়ে, প্রত্যেকে বইয়ের সাদা অংশে কমপ্লিমেন্ট লিখেছিল।
উদ্যোগ     ১৫       :    ” মুভিক্লাব” – যেহেতু বুয়েট লাইফে পড়াশোনা বাদে সবই করেছি, তাই এসময় বিভিন্ন কর্মশালা, দর্শন ক্লাব, মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি, লিটল ম্যাগ- অনেক কিছুর সাথেই যুক্ত হয়ে পড়ি। তার প্রেক্ষিতে একসময় ফিল করি আমি নিজেই একটা মুভি ক্লাব চালু করি না কেন। তখনই ‘এনলাইটেন’ নামে একটা গ্রুপ চালু করি। নিজে একটা নাটক বানাই, পুরোপুরি প্রফেশনাল সেট আপ এ। নাম ছিলো মনীষী সিনড্রোম। সেটা টিভিতে প্রচারের জন্য অনেক চ্যানেল, পত্রিকা অফিসে ঘুরাঘুরিও করি; কিন্তু কাজটা এতোটাই এমেচার লেভেলের হয় যে, সেটা কোন্ খায়েশে টিভিতে প্রচার করতে চেয়েছিলাম এটা ভেবে এখনো হাসি পায়। পরবর্তীতে র‌্যাগ ডে উপলক্ষ্যে একটা ৭১ মিনিটের টেলিফিল্ম বানাই ‘একদা-একসময়’। এটা অবশ্য ভালোমানের হয়েছিলো বলেই ধারণা আমার। এটা ইউটিউবে এখনো পাওয়া যায়। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকগুলোর কপিরাইট না থাকায় দেশের বাইরে থেকে এই নাটকের মিউজিকগুলো শোনা যাবে কিনা শিওর না এবং মোবাইল থেকে দেখা যায় না। ডেস্কটপে বা ল্যাপটপে দেখলে নাটকটা ভালোমতো দেখা যাবে। যেহেতু ফিল্ম মেকিং যথেষ্ট এক্সপেনসিভ একটা ব্যাপার, তাই শখ করে বারবার এগুলো বানানোর মতো সাহস বা ইচ্ছা হয়নি। যে কারণে আমার ‘এনলাইটেন’ মুভি ক্লাব বুয়েট পাশের পর হারিয়ে যায়। তবে, জীবনের একটা পর্যায়ে ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখার ইচ্ছা এখনোআছে। এটা পূরণ হলে খুশি হবো।

উদ্যোগ     ১৬     :    ” নৈর্ব্যক্তিক সাংস্কৃতিক দল (নৈসাদ)” –  বুয়েটে আমার ডিপার্টমেন্ট ছিলো এমএমই। ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আমি কালচারালি সুপার একটিভ ছিলাম। একদম ফার্স্ট ইয়ারেই নিজে উদ্যোগ নিয়ে দেয়ালিকা প্রকাশ করি। এরপর পুঁথি লেখা (গাওয়া), জারি গান, প্যারোডি গান, গম্ভীরা, নাটকের স্ক্রিপ্ট- ৩ বছরে প্রচুর এক্টিভিটি করেছি। ৪র্থ বছরে এসে প্রথমবারের মতো এমএমই ডে হয়, সেখানে একটা যাত্রাপালা বানাই সাতভাই চম্পা এর রিমেক ভারসন। এটার কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাচের প্রচুর ছেলে-মেয়ের সাথে ইন্টিমেসি গড়ে উঠে। ফলশ্রুতিতে ডে শেষে একটা কালচারাল ক্লাব গঠন করি যার নাম দিই নৈর্ব্যক্তিক সাংস্কৃতিক দল, সংক্ষেপে নৈসাদ। সেটার এক্সিকিউটিভ কমিটি গঠন করা হয়, বেশ কয়েকটা সভাও হয়। কিন্তু আমি বাদে বাকি সবারই জীবনের লক্ষ্য ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, নৈসাদ ওয়াজ জাস্ট এ ফান। ফলে এই ক্লাব বেশিদূর এগুতে পারেনি।

উদ্যোগ        ১৭     :   ” প্রিন্টিং” –  এটা এখনো পর্যন্ত আমার জীবনের একমাত্র মানি সিকিং উদ্যোগ। আমাদের নানা প্রয়োজনেই প্রচুর এসাইনমেন্ট প্রিন্ট করতে হতো। এছাড়া, ফোর্থ এয়ারের ভাইয়াদের থিসিস প্রিন্টিং তো ছিলোই, সেসময় আমাদের হলের ছেলেরা তিতুমীর বা রশিদ হল এ যেত প্রিন্ট করতে। আমি একটা প্রিন্টার কিনেছিলাম মূলত আমার গল্পগুলো প্রিন্ট করে মানুষকে পড়তে দিতে। নিজের এসাইনমেন্ট প্রিন্ট করতে যখন প্রায়ই আমার রুমমেটরা অন্য হল এ যেত, তখন তাদেরই একজন পরামর্শ দেয় আমিও যেন প্রিন্টিং বিজনেস শুরু করি। তার পরামর্শমতো শুরু করে দিই, কিন্তু এই বিজনেস চালাতে গেলে বেশিরভাগ সময় রুমে থাকতে হয়, সারাক্ষণ মানুষ আসতেই থাকে, ফলে ব্লগিংয়ে মনোযোগ ব্যহত হয়, এইসমস্ত নানা কারণে ৬ মাস পরই এই বিজনেস বন্ধ করে দিই।

উদ্যোগ      ১৮      :     ” পিঁপড়া টিম”  –   এটা এখনো পর্যন্ত আমার জীবনের বেস্ট উদ্যোগ। আমার জীবনের লক্ষ্যই ছিলো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এ কাজ করা, আরও স্পেসিফিক করে বললে ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট। সেটা কীভাবে করা যায়, এটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে হল লাইফে দেখা অভিজ্ঞতা মনে পড়ে যায়। আমি দেখেছি, প্রচুর ইন্টেলিজেন্ট ও ক্রিয়েটিভ ছেলে-মেয়ে হাত খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করে। এটা যদি কেউ এনজয় করে সমস্যা নেই, কিন্তু শুধুমাত্র টাকার প্রয়োজনে টিউশনি করবে এটা মানতে কষ্ট হয় আমার। তারই ধারাবাহিকতায় চিন্তা করে একটা সমাধান বের করে, যেখানে তরুণেরা বাসায় বসেই কাজ করতে পারবে, অফিসে নিয়মিত আসার বাধ্যকতা থাকবে না, অথচ হাত খরচের টাকাটাও পেয়ে যাবে। অন্যদিকে, কোম্পানীতেও এমন কিছু কাজ থাকে যেগুলোর জন্য ফুলটাইম এমপ্লোয়ি রাখা কস্ট ইফেকটিভ নয়, সেই কাজগুলো যদি এইসব তরুণকে দেয়া যায় তাহলে লাভ হচ্ছে দুটো। প্রথমত, তরুণটি ছাত্রাবস্থায়ই একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপেরিয়েন্স পাচ্ছে, যেটা ছাত্রজীবন শেষে তাকে এডভান্টেজ দিবে। দ্বিতীয়ত, কোম্পানী লো-পেমেন্ট এ কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ পাচ্ছে, যা মিউচুয়াল বেনিফিট। আমি এই উদ্যোগের নাম দিই পিঁপড়া টিম। এটা এখনো চলছে, এবং আমার হিউম্যানল্যাব বিডি এর কল্যাণে এটা চলতেই থাকবে।

উদ্যোগ     ১৯      :    ” রকমারি ক্রিকেট টিম” –  এটা আমার জীবনের সেকেন্ড বেস্ট উদ্যোগ। ক্রিকেট নিয়ে আমি ছোটবেলা থেকেই ফ্যাসিনেটেড, ইচ্ছা ছিলো বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করবো। সেখান থেকেই রকমারি ক্রিকেট টিম গড়ে তোলা। এই টিমের ক্রিকেটাররা সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে ক্রিকেট খেলে, এবং সারা দেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের প্রোফাইল তৈরি করে, ম্যাচের ফলাফল যা-ই হোক, প্রতিপক্ষের ভালো খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করে। এছাড়া, এই টিমের খেলোয়াড়দের স্পোর্টিং মেন্টালিটি, বিহেভিয়ার, ক্রিকেট সেন্স প্রফেশনালিজম প্রভৃতি বিষয়ের উপর নিয়মিত কোর্স করানো হয়, ওরা ম্যাচ খেললে কিছু হাত খরচও পায়। ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল এই টিম যাত্রা শুরু করেছিল, এখনো পর্যন্ত এই টিম নিয়ে আমরা ১৫ টি জেলা ঘুরেছি, ১০০ টি ম্যাচ খেলে ফেলেছি। অনলাইন প্রতিষ্ঠান রকমারি.কম এই টিমের স্পন্সর করে বিধায় তাদের নামানুসারে এর নাম টিম রকমারি রাখা হয়েছে। এই টিম নিয়ে ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে আমার। বড় কোম্পানীগুলোর সাথেও কোলাবরেট করার ইচ্ছা আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মিনিংফুল কন্ট্রিবিউশন রাখার উদ্দেশ্যেই এই টিমের কনসেপ্ট তৈরি করেছিলাম, এবং এখনো পর্যন্ত যা করেছি তাতে আমি খুশি। ইনভেস্টমেন্ট জটিলতায় টিমের কার্যক্রম একটা লেভেল এ আটকে আছে সত্যি, কিন্তু কনসেপ্ট যেহেতু রেডি এটা নিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়তোবা।

উদ্যোগ         ২০         :          ” মেন্টাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট” –  এটা শুরু হয়েছিল ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে, পরে এটাকে অন্যরকম গ্রুপের সিএসআর এক্টিভিটির অধীনে নিয়ে যাই যাতে উদ্যোগটাকে বড় পরিসরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া সম্ভব হয়। উদ্যোগটা শুরু করি এভাবে, পরিচিত ও ঘনিষ্ঠজনদের জন্মদিন বা বিশেষ উপলক্ষ্যে বই উপহার দিই। এটাকে পরে যখন অন্যরকম গ্রুপের সিএসআর কার্যক্রমে ঢুকাই, এর টার্গেট গ্রুপ হয় অবসরপ্রাপ্ত ও নিঃসঙ্গ বয়স্ক মানুষ, যাদের সময় কাটানোর জন্য বই প্রয়োজন। ১৫০০ টাকা রেঞ্জ এর বই প্রত্যেককে উপহার দেয়া হয়। আমি নিজে এই উদ্যোগটা এখনো চালিয়ে যাচ্ছি ব্যক্তিগত পর্যায়ে, অন্যরকম গ্রুপ বেশ কিছুদিন চালানোর পর বর্তমানে বন্ধ রেখেছে কার্যক্রম। তাতে অবশ্য উদ্যোগের মাহাত্ম্য কিছু কমেনি।

উদ্যোগ        ২১        :       “মানবগবেষক প্রোজেক্ট”  –  ইন্ট্রোভার্ট এবং চিন্তাশীল মানুষ যারা মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে,হিউম্যান বিহেভিয়ার নিয়ে গবেষণা করতে চায় তাদের কাজটাকে এইচআর ডিপার্টমেন্ট এর আওতায় এনে একটা ডিফারেন্ট টাইপ প্রোজেক্ট শুরু করেছিলাম। বর্তমানে স্থগিত আছে, তবে আবারো চালু করবো।

উদ্যোগ        ২২        :           ” ব্যাঙাচি সভা” – এটাই আমার ৩০ বছরের জীবনের শেষ সামাজিক উদ্যোগ। এটা মূলত বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষের আড্ডার একটা প্লাটফরম। আমি উদ্যোগটা নিজে হ্যান্ডল না করে অন্যদের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, যে কারণে এটা খুব বেশি এগুতে পারেনি। তবে আগামী কয়েক বছরে এই উদ্যোগটা নিয়ে আমি প্রচুর সময় দিব। তখন আশা করা যায় ব্যাঙাচি সভা একটি ব্যতিক্রমী নেটওয়ার্কিং প্লাটফরম হিসেবে নিজের অবস্থান অর্জন করে নিবে।

দ্য ফাইনাল গেম     :   ” HumanLabBd “     –   এটা আমার ব্যবসায়িক উদ্যোগ। এখনো ফুল সুইংয়ে শুরু করিনি, ওয়েবসাইট নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে এতো কথা লিখবো যে, এখানে লেখার তাগিদ বোধ করছি না। সময় বাঁচান, নিজে বাঁচুন, আনন্দে থাকুন।
উদ্দীপনা উচ্ছ্বাসে কনভার্টেড হোক, উদ্যম বিবর্ধিত হতে থাকুক যতদিন বাঁচি।।।